ঈশ্বরের সিংহাসন

উইকিপিডিয়া, মুক্ত বিশ্বকোষ থেকে
১৬৯৬ সালের বাইবেলে অঙ্কিত সৃষ্টিকর্তার সিংহাসন।

ঈশ্বরের সিংহাসন বা সৃষ্টিকর্তার সিংহাসন হচ্ছে ইব্রাহিমীয় ধর্ম বিশেষ করে ইসলাম, খ্রিস্টান এবং ইহুদি ধর্মে বর্ণিত পরম প্রভুর নিদর্শন ও অবস্থানস্থল। মুসলমানগণ এটাকে বলে আল্লাহর আরশ (আরবিতে আল-আরশ), খ্রিস্টানদের কাছে থ্রোন অব গড (throne of God) বা ঈশ্বরের সিংহাসন এবং ইহুদিদের কাছে আরাবত[১] নামে পরিচিত। পবিত্র ধর্মগ্রন্থসমূহে ঈশ্ব‌রের সিংহাসনের কথা বলা হয়েছে। ইব্রাহিমীয় ধর্মমতানুসারে, এটি সপ্তম স্বর্গের উপরে অবস্থিত।

ইব্রাহিমীয় ধর্মে[সম্পাদনা]

ইসলাম ধর্ম[সম্পাদনা]

ইসলাম ধর্মমতে আরশ (আরবী: العرش‎ ইংরেজিঃ Al-ʿArsh) হচ্ছে আল্লাহর সব থেকে বড় সৃষ্টি। মুসলমানগণ বিশ্বাস করেন আল্লাহ তার ক্ষমতার নিদর্শন স্বরূপ আরশ মঞ্জিল সৃষ্টি করেছেন। কিছু মুসলিম, যেমন আছারীসালাফিগণ বিশ্বাস করেন, আল্লাহ আরশকে তার ক্ষমতার নিদর্শ‌ন ও বাসস্থান উভয় হিসেবে সৃষ্টি করেছেন;[২][৩][৪], কিছু মুসলিম, যেমন অধিকাংশ সুফিআশআরী-মাতুরিদীগণ বিশ্বাস করেন যে, আল্লাহ শুধুমাত্র তার ক্ষমতার নিদর্শ‌ন হিসেবে আরশকে সৃষ্টি করেছেন, বাসস্থান হিসেবে নয়;[৫] [৬][৭][৮]। আবার অনেকে একে রূপক হিসেবে বর্ননা করেন, এবং অনেকে বলেন, মুমিনের অন্তর হচ্ছে আল্লাহর আরশ (قلب المؤمن عرش الله), যা সালাফী মুসলিম পণ্ডিতদের দ্বারা সমালোচিত একটি বিষয়।[৯] কুরআনের ২৫ জায়গায় আরশের উল্লেখ আছে। কুরআনের কয়েকটি আয়াতের (বাক্য) সম্ভাব্য অনুবাদ হল,

"নিশ্চয় তোমাদের রব আল্লাহ। যিনি আসমানসমূহ ও যমীন সৃষ্টি করেছেন ছয় দিনে, তারপর আরশে উঠেছেন। তিনি সব বিষয় পরিচালনা করেন। তার অনুমতি ছাড়া সুপারিশ করার কেউ নেই। তিনিই আল্লাহ, তোমাদের রব। সুতরাং তোমরা তাঁর ইবাদাত কর। তারপরও কি তোমরা উপদেশ গ্রহণ করবে না?"[১০]

তিনিই আসমান ও যমীন ছয় দিনে তৈরী করেছেন, তাঁর আরশ ছিল পানির উপরে, তিনি তোমাদেরকে পরীক্ষা করতে চান যে, তোমাদের মধ্যে কে সবচেয়ে ভাল কাজ করে। আর যদি আপনি তাদেরকে বলেন যে, "নিশ্চয় তোমাদেরকে মৃত্যুর পরে জীবিত ওঠানো হবে, তখন কাফেরেরা অবশ্য বলে এটা তো স্পষ্ট যাদু!"[১১]

"সুতরাং আল্লাহ্‌ মহিমান্বিত, প্রকৃত মালিক, তিনি ছাড়া কোন (সত্য) উপাস্য নেই; তিনি সম্মানিত ‘আরশের অধিপতি।"[১২]

"আর আপনি ফেরেশতাদেরকে দেখতে পাবেন যে, তারা 'আরশের চারপাশে ঘিরে তাদের রবের সপ্ৰশংস পবিত্ৰতা ও মহিমা ঘোষণা করছে। আর তাদের মধ্যে বিচার করা হবে ন্যায়ের সাথে এবং বলা হবে, সকল প্রশংসা সৃষ্টিকুলের রব আল্লাহর প্রাপ্য।"[১৩]

আল কোরআনে আল্লাহর সিংহাসন বা কুরসি সম্পর্কে সুরা বাকারায় আয়াতুল কুরসি নাজিল হয়েছে। এই আয়াতে আল্লাহর নাম আল-হাইয়্যু, আল-কাইয়ুম[১৪] এর কথা বলা হয়েছে। হাদিসে আছে, রসুল বলেছেন, প্রতি নামাজের পর যে ব্যক্তি আয়াতুল কুরসি পাঠ করবে তার পুরস্কার জান্নাত[১৫] এবং এটা পাঠ করলে শয়তানের হাত থেকে পরিত্রাণ লাভ করা যায়।.[১৬] হাদিস থেকে জানা যায় আরশ মঞ্জিলের অবস্থান সর্বোচ্চ জান্নাত 'জান্নাতুল ফিরদাউস'এর উপরে।[১৭]

খ্রিস্টান ধর্ম[সম্পাদনা]

সিংহাসনে উপবিষ্ট পিতা গড,ওয়েস্টফালিয়া, জার্মানি, ১৫ শতকের শেষার্ধে অঙ্কিত।

নতুন বাইবেল বা নিউ টেস্টামেন্টে থ্রোন অব গডকে কয়েক রূপে[১৮] বর্ণনা করা হয়েছে। দাউদের সিংহাসন, থ্রোন অব গ্লোরি, থ্রোন অফ গ্রেস এবং আরো অনেক[১৮] । ইহুদি ধর্মে বর্ণিত স্বর্গকেও"[১৯] নতুন বাইবেলে গডের সিংহাসন হিসেবে বর্ণনা করা হয়েছে।

ইহুদি ধর্ম[সম্পাদনা]

মিকাইয়াহ (১ রাজা ২২, ১৯), ইসাইয়া (ইসাইয়া ৬), ইজিকিয়েল (ইজিকিয়েল ১))[২০] এবং দানিয়েল (দানিয়েল ৭,৯) সবাই ঈশ্বরের সিংহাসনের কথা উল্লেখ করেছেন।.[২১]

অ-ইব্রাহিমীয় ধর্মে[সম্পাদনা]

হিন্দু ধর্ম[সম্পাদনা]

বিষ্ণু অনন্ত শেষে বিশ্রাম নিচ্ছেন। দেবী লক্ষী তার পদসেবা করছেন।

হিন্দু ধর্মের বৈষ্ণব মতে ভগবান বিষ্ণুর সিংহাসন হচ্ছে শেষ(সংস্কৃতঃ शेष) বা শেষনাগ(शेषनाग)। শেষ'কে অনেক সময় অনন্ত শেষ বা আদি শেষ(आदिशेष) নামেও ডাকা হয়। সাধারনত শেষনাগ সম্পর্কে মন্তব্য করা হয় এটি বিশাল দুগ্ধসাগরে ভাসমান একটি কুন্ডলী পাকিয়ে থাকা সাপ, যেখানে বিষ্ণু শুয়ে থাকেন। তিনি কখনো পাঁচ বা সাত মাথা আবার কখনো হাজার মাথা নিয়ে আবির্ভূত হন।[২২]

গ্রন্থপঞ্জি[সম্পাদনা]

তথ্য উৎস[সম্পাদনা]

  1. In Seventh Heaven
  2. Rifai, Sayyid Rami Al (২০১৬)। The Light Of Allah In The Heavens and The Earth: The Creation Of The Atom (24:35) and The Physics Of Spirituality (ইংরেজি ভাষায়)। Sunnah Muakada। 
  3. Elias, Jamal J. (১৯৯৫)। The Throne Carrier of God: The Life and Thought of 'Ala' ad-dawla as-Simnani (ইংরেজি ভাষায়)। SUNY Press। আইএসবিএন 9780791426111 
  4. al-Din, Khwajah Kamal (১৯৬৩)। The Islamic Review (ইংরেজি ভাষায়)। Woking Muslim Mission and Literary Trust। 
  5. The Creed of Imam Al-Tahawi 
  6. Die Welt des Islams (ইংরেজি ভাষায়)। D. Reimer। ২০০৩। 
  7. Shahrur, Muhammad (২০০৯)। The Qur'an, Morality and Critical Reason: The Essential Muhammad Shahrur (ইংরেজি ভাষায়)। BRILL। আইএসবিএন 9789047424345 
  8. Yılmaz, Hakkı। The Division By Division English Interpretation of THE NOBLE QUR’AN in The Order of Revelation (ইংরেজি ভাষায়)। Hakkı Yılmaz। পৃষ্ঠা 566। 
  9. জাব্বার, আব্দুননূর ইবন আব্দুল (৭ এপ্রিল ২০১৫)। আকীদাহ্ সম্পর্কিত কতিপয় গুরুত্বপূর্ণ মাস’আলাহ্ - বাংলা - আব্দুননূর ইবন আব্দুল জাব্বার (পিডিএফ)। ইসলামহাউজ.কম। পৃষ্ঠা ৭। সংগ্রহের তারিখ ৬ জানুয়ারি ২০২৩ 
  10. আল-কুরআন, সুরা ইউনুস, আয়াত ৩
  11. আল কুরআন, সূরা হুদ, আয়াত ৭
  12. আল-কুরআন, সুরা আল-মুমিনুন, আয়াত ১১৬
  13. আল কোরআন, সুরা আজ-জুমার, ৩৯ নং সুরা, আয়াত ৭৫
  14. Book 004, Number 1768: (Sahih Muslim) 
  15. Sunnan Nasai’i al Kubra, (6/30), At-Tabarani; Al-Kabeer (8/114) 
  16. Saheeh Al Bukhari - Volume 3, Book 38, Number 505 
  17. Saheeh al-Bukhaari (#2581) 
  18. Kittel 1966, পৃ. 164–166
  19. William Barclay The Gospel of Matthew: Chapters 11-28 p340 Matthew 23:22 "And whoever swears by heaven swears by the throne of God and by him who sits upon it."
  20. "Ezekiel 1.26" in the 1901 American Standard Bible. @
  21. Bowker 2005, পৃ. Throne of God entry
  22. "Bhag-P 10.1.24"। ৯ এপ্রিল ২০১৪ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২১ জুলাই ২০১৪