কক্ষকীয় সংকরায়ণ

উইকিপিডিয়া, মুক্ত বিশ্বকোষ থেকে

রসায়নে কক্ষকীয় সংকরায়ণ (ইংরেজি: Orbital hybridization) হল দুই বা ততোধিক পারমাণবিক কক্ষক-এর মিশ্রণ ও নতুন সংকর কক্ষকের সৃষ্টি যার আকার, আকৃতি, শক্তি সবকিছুই সাধারণ কক্ষকের থেকে আলাদা। এটি যোজনী বন্ধন তত্ত্বকে সমর্থন করে। যেমন, কার্বন মিথেন অণু গঠনের সময় চারটি হাইড্রোজেন-এর প্রতিটির সঙ্গে একটি সমযোজী একবন্ধন গঠন করে। এই বন্ধন চারটি কার্বনের চারটি sp3 ও চারটি হাইড্রোজেনের প্রতিটির একটি s কক্ষকের মুখোমুখি সংযোগের ফলে সৃষ্ট ও এর আকৃতি চতুস্তলকীয়। এটি অণুর জ্যামিতি বর্ণনা করতে সক্ষম। সাধারণত যে কক্ষকগুলির শক্তির তফাত কম বা খুব একটা বেশি না, তারা সংকর কক্ষক গঠনে অংশ নেয়।[১]

ইতিহাস[সম্পাদনা]

রসায়নবিদ লিনাস পাউলিং মিথেন অণুর গঠন ব্যাখ্যা করতে গিয়ে প্রথম সংকরায়ণের ধারণা দেন (১৯৩১)।[২] তিনি লক্ষ্য করেন মিথেন এর চারটি C—H বন্ধনই সমান দৈর্ঘ্যের ও সমান শক্তিবিশিষ্ট। অথচ কার্বনের একটি s ও তিনটি p কক্ষক বর্তমান যাদের শক্তির তফাত বর্তমান। s ও p কক্ষক আবার নিজেদের সাথে ৯০° কোণে থাকে কিন্তু, C—H বন্ধন গুলি নিজেদের মধ্যে ১০৯.৫° কোণে আনত।[৩] তখন তিনি s ও p উভয়ের সংকরায়ণের ফলে সৃষ্ট সংকর কক্ষকের ধারণা দেন, যাদের ধর্মাবলী s ও p এর সাথে মেলেনা, এদের শক্তিস্তর s ও p এর মধ্যবর্তী। মিথেনের ক্ষেত্রে sp3 সংকরায়ণের কথা তিনি বলেন যেহেতু একটি s কক্ষক ও তিনটি p কক্ষকের সংকরায়ণের ফলে সংকর কক্ষকের সৃষ্টি।[৪]

প্রকারভেদ[সম্পাদনা]

spx সংকরায়ণ[সম্পাদনা]

সর্বগাঙ্ক সংখ্যা আকার সংকরায়ণ উদাহরণ
রৈখিক sp সংকরায়ণ (১৮০°) CO2
ত্রিকোণীয় সামতলিক sp2 সংকরায়ণ (১২০°) BCl3
চতুস্তলকীয় sp3 সংকরায়ণ (১০৯.৫°) CCl4
আন্তঃকক্ষকীয় কোণ[৫]

spxdy সংকরায়ণ[সম্পাদনা]

সর্বগাঙ্ক সংখ্যা আকার সংকরায়ণ উদাহরণ
বর্গাকার সামতলিক sp2d সংকরায়ণ PtCl42−
ত্রিকোণীয় দ্বি-পিরামিডীয় sp3d সংকরায়ণ Fe(CO)5
বর্গ-পিরামিডীয় MnCl52−
অষ্টতলকীয় sp3d2 সংকরায়ণ Mo(CO)6
পঞ্চকোণীয় দ্বি-পিরামিডীয় sp3d3 সংকরায়ণ ZrF73−
Capped octahedral MoF7
Capped trigonal prismatic TaF72−
Square antiprismatic sp3d4 সংকরায়ণ ReF8
দ্বাদশতলকীয় Mo(CN)84−
Bicapped trigonal prismatic ZrF84−
Tricapped trigonal prismatic sp3d5 সংকরায়ণ ReH92−
Capped square antiprismatic

আণবিক জ্যামিতি ও সংকরায়ণ[সম্পাদনা]

বিভিন্ন সংকর কক্ষকের আকৃতি

সংকরায়ণ অণুর আকৃতি ব্যাখ্যা করতে সাহায্য করে, যেহেতু বন্ধনের মধ্যে কোণগুলি প্রায় সংকর কক্ষকের মধ্যেকার কোণের সমান। এটি যোজ্যতা কক্ষ ইলেক্ট্রন-জোড় বিকর্ষণ (VSEPR) তত্ত্ব এর বিপরীতে, যা ভ্যালেন্স-বন্ড বা অরবিটাল তত্ত্বের পরিবর্তে অভিজ্ঞতামূলক নিয়মের ভিত্তিতে আণবিক জ্যামিতির পূর্বাভাস দিতে ব্যবহার করা যেতে পারে।[৬]

তথ্যসূত্র[সম্পাদনা]

  1. Housecroft, Catherine E.; Sharpe, Alan G. (২০০৫)। Inorganic Chemistry (2nd সংস্করণ)। Pearson Prentice-Hal। পৃষ্ঠা 100। আইএসবিএন 0130-39913-2 
  2. Pauling, L. (১৯৩১), "The nature of the chemical bond. Application of results obtained from the quantum mechanics and from a theory of paramagnetic susceptibility to the structure of molecules", Journal of the American Chemical Society, 53 (4): 1367–1400, ডিওআই:10.1021/ja01355a027 
  3. Brittin, W. E. (১৯৪৫)। "Valence Angle of the Tetrahedral Carbon Atom"। J. Chem. Educ.22 (3): 145। ডিওআই:10.1021/ed022p145বিবকোড:1945JChEd..22..145B 
  4. L. Pauling The Nature of the Chemical Bond (3rd ed., Oxford University Press 1960) p.111–120.
  5. Weinhold, Frank; Landis, Clark R. (২০০৫)। Valency and bonding: A Natural Bond Orbital Donor-Acceptor Perspective। Cambridge: Cambridge University Press। পৃষ্ঠা 367, 374–376, 381–383। আইএসবিএন 978-0-521-83128-4 
  6. Gillespie, R.J. (২০০৪), "Teaching molecular geometry with the VSEPR model", Journal of Chemical Education, 81 (3): 298–304, ডিওআই:10.1021/ed081p298অবাধে প্রবেশযোগ্য, বিবকোড:2004JChEd..81..298G