কফম্যান ডেজার্ট হাউজ

স্থানাঙ্ক: ৩৩°৫০′৪২″ উত্তর ১১৬°৩৩′১০″ পশ্চিম / ৩৩.৮৪৫১° উত্তর ১১৬.৫৫২৯° পশ্চিম / 33.8451; -116.5529
উইকিপিডিয়া, মুক্ত বিশ্বকোষ থেকে
কফম্যান ডেজার্ট হাউজ
কফম্যান ডেজার্ট হাউজ, নভেম্বর ২০০০
মানচিত্র
সাধারণ তথ্য
অবস্থাসম্পূর্ণ
স্থাপত্য রীতিআন্তর্জাতিক
অবস্থান৪৭০ পশ্চিম ভিস্তা কিনো
পাম স্প্রিংস, ক্যালিফোর্নিয়া
মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র
স্থানাঙ্ক৩৩°৫০′৪২″ উত্তর ১১৬°৩৩′১০″ পশ্চিম / ৩৩.৮৪৫১° উত্তর ১১৬.৫৫২৯° পশ্চিম / 33.8451; -116.5529
নির্মাণকাজের সমাপ্তি১৯৪৬
নকশা এবং নির্মাণ
স্থপতিরিচার্ড জে. নেওত্রা

কফম্যান ডেজার্ট হাউজ (কফম্যান মরুভূমির ঘর) ক্যালিফোর্নিয়ার পাম স্প্রিংয়ে অবস্থিত একটি বিলাসবহুল আবাসিক ধাঁচের স্থাপনা। স্থপতি রিচার্ড নেওত্রা ১৯৪৬ সালে এটি ডিজাইন করেন। স্থপতি নেওত্রার করা বড় স্থাপনার মধ্যে এটিই শেষ কাজ তবে স্থাপত্য বিবেচনায় এটি খুবই উল্লেখযোগ্য এবং বিখ্যাত। যুক্তরাষ্ট্রে স্থাপত্যের আন্তর্জাতিক ধারার একটি মাত্র উদাহরণ যা এখনো ব্যক্তি মালিকানায় আছে। ২০০৮ সালে এটি বিক্রির প্রস্তাব করা হয়েছিল। [১]

বর্ণনা[সম্পাদনা]

পাঁচটি কক্ষ এবং পাঁচটি বাথরুম সংবলিত এই অবকাশ বাড়ির ডিজাইনে মরু এলাকার রুক্ষ ভূ-বৈচিত্রের সাথে একটি বাসযোগ্য পরিসরের সংযোগ স্থাপনকে গুরুত্ব দেয়া হয় এবং একই সাথে বৈরী পরিবেশে নিরাপদ আবাসের ধারণা বাস্তবায়ন করা হয়। বড় আকারের স্থানান্তরযোগ্য কাঁচের দেয়াল সাধারন পরিসর এবং শয়নকক্ষকে ছাদ ঢাকা সম্মুখ বারান্দায় উম্মুক্ত করেছে। প্রধান প্রধান বহি:পরিসরকে স্থানান্তরযোগ্য উল্লম্ব পর্দা দ্বারা ঘিরে দেয়ার ব্যবস্থা করা হয়েছে ফলে অতিরিক্ত তাপ বা ধুলোঝড় থেকে নিরাপদ থাকা সম্ভব হয়েছে।

বাড়ির একদম কেন্দ্রে মোটামুটি বর্গাকৃতির বৈঠকখানা ও খাবার কক্ষের যুক্ত অবস্থান। পূর্ব-পশ্চিম অক্ষ বরাবর লম্বাটে মুল কাঠামো থেকে চারটি বাড়তি অংশ সমকোনে নিজ অক্ষ বরাবর বর্ধিত হয়েছে। প্রত্যেক বর্ধিত অংশের শেষে বড় পরিসরের সুচিন্তিত কক্ষ বিন্যাস এবং চলাচল পথের অবস্থান ভবন সংলগ্ন বহি:পরিসরকে চিহ্নিত করতে ভূমিকা রেখেছে।

সম্মুখ জলাধার

দক্ষিণ বর্ধিতাংশ হচ্ছে বাড়ির সম্মুখভাগের বহি:পরিসর যেখানে গাড়ি পার্কিং এবং দুটো লম্বা, ছাদ ঢাকা পায়ে হাটা পথ। একটি বৃহদাকার পাথুরে দেয়াল একে ভবন থেকে আলাদা করে প্রধান প্রবেশ পথের সাথে সংযুক্ত করেছে। পূর্বের বর্ধিতাংশ উত্তরমুখী অভ্যন্তরীন গ্যালারী হয়ে নিজস্ব পারিবারিক বৈঠকথানার সাথে সংযুক্ত। প্রধান পারিবারিক স্যুটের অবস্খানও এখানে। ছাদঢাকা সেতু হয়ে পশ্চিমেে এগিয়ে রান্নাঘর, পরিচারিকাদের পরিসর। উত্তর বর্ধিতাংশে আরেকটি উম্মুক্ত পথ বহি:বারান্দা হয়ে দুটো অতিথি কক্ষের দিকে চলে গেছে।

ইতিহাস[সম্পাদনা]

পিটসবার্গের এক ডিপার্টমেন্টাল স্টোরের স্বত্বাধিকারী, ব্যবসায়ী এডগার জে. কফম্যানের মরু নিবাস হিসেবে এ বাড়ির জন্ম। ১৯৪৬ সালে এটি নির্মিত হয়। স্থপতি ফ্র্যাংক লয়েড রাইটের ডিজাইনে ফলিংওয়াটার নামে কফম্যানের আরেকটি বিখ্যাত অবকাশ বাড়ি নির্মান শেষ হবারও প্রায় এক যুগ পরে কফম্যান পুনরায় আরেকটি অবকাশ ভবন নির্মানের পরিকল্পনা করেন। জুলিয়াস স্যুলমানের ১৯৪৭ সালের ফটোগ্রাফীর সুবাদে এ মরু নিবাসটি ব্যাপক পরিচিতি লাভ করে।[২]

১৯৫৫ সালে কফম্যানের মৃত্যর পরে বাড়িটি কয়েক বছর অব্যবহৃত পড়ে থাকে। বেশ কয়েকবার মালিকানা বদল হয় এবং সেই সাথে কিছু পরিবর্ধন ও পরিমার্জন হয়। সংগীত শিল্পী বারি ম্যানিলো, সানদিয়েগো চার্জারের স্বত্তাধিকারী ইউজিন ভি ক্লেইন প্রমুখ বিভিন্ন সময় এটি ক্রয় করেন[৩] এবং কয়েকবার এতে পরিবর্ধন পরিমার্জনও করা হয়। এইসব পরিবর্ধন কাজের সময়ে বারান্দাকে ঘিরে দেয়া হয়, শয়নকক্ষের দেয়ালে লতাপাতার নকশা করা দেয়ালপেপার লাগানো হয় এবং যোগাযোগ কক্ষ সংযোজন করতে গিয়ে একটি দেয়াল তুলে দেয়া হয়। শীতাতপ নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থা বসাতে গিয়ে ছাদরেখায়ও কিছু পরিবর্তন আসে। এরপরে আবার সাড়ে তিন বছর ধরে বাড়িটি বিক্রির অপেক্ষায় পড়ে থাকে।[২] অবশেষে ১৯৯২ সালে বেন্ট হ্যারিস এবং বেথ এডওয়ার্ড হ্যারিস দম্পতির নজরে আসে।

বেন্ট হ্যারিস একজন বিনিয়োগ ব্যবস্থাপক এবং বেথ এডওয়ার্ড হ্যারিস ছিলেন একজন স্থাপত্য ইতিহাসবিদ।এই দম্পতি ১.৫ মিলিয়ন ডলারে ডেজার্ট হাইজ কিনে নেন এবং বাড়িটিকে এর আসল অবস্থানে নিয়ে আসার ঘোষণা দেন। নেওত্রা ১৯৭০ সালে মারা যান।নেওত্রার মৃত্যুর পরে আসল নকশা পাওয়া যাচ্ছিলো না। এমতাবস্থায় হ্যারিস লস এঞ্জলেসের স্থপতি লিও মার্মল এবং রন রেজিনারকে নিয়ে আসেন।[৪]। বাড়ির মুল নকশার সন্ধানে হ্যারিস কলাম্বিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ে নেওত্রার সংগ্রহশালায় ব্যাপক অনুসন্ধান করেন। কলাম্বিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ে কিছু অতিরিক্ত দলিল পাওয়া যায় এবং জুলিয়াস স্যুলমানের বেশ কিছু অপ্রকাশিত স্থিরচিত্রের সহায়তা নিয়ে অন্দরভাগ সম্পর্কে ধারণা নেয়া হয়। তাছাড়া রং এবং বিভিন্ন উপকরনের আসল সরবরাহকারীর কাছ থেকে স্যাম্পল সংগহের সুযোগ তৈরী হয়। ছাদ ঢেকে দেয়া ধাতব আবরনের হারিয়ে যাওয়া চেহারা ফিরিয়ে আনতে হ্যারিস ধাতব পরিষ্কারক যন্ত্র কিনে নেন।

এছাড়া যেসব যায়গায় মার্বেল নষ্ট হয়ে গিয়েছিলো বা নড়বড়ে হয়ে গিয়েছিলো সেগুলো পরিবর্তনের জন্য মার্বেল মিলিয়ে খোলা বারান্দার লম্বা বন্ধ অংশটিকে পুনরায় উম্মুক্ত করে দিতে সক্ষম হলেন। মরুময়তা থেকে নিরাপদ থাকার জন্য নেওত্রার যে দূরবর্তী পরিকল্পনা ছিলো তা বাস্তবায়নের সুবিধার্থে হ্যারিস আরো কয়েকটি প্লট যুক্ত করেন। ৩২০০ বর্গফুটের বাড়ি সহ পুরো এলাকার আয়তন তখন প্রায় দ্বিগুন হয়ে যায়।[২]

ভবনের সামনে একটি কৃত্রিম জলাধার স্থাপন করা হয় যা ভবনের জন্য প্রতিফলন গ্যালারী হিসেবে কাজ করে। কফম্যানের সম্পত্তি হিসেবে পরে যুক্ত হওয়া এক প্লটে টেনিস কোর্টও রাখেন। হ্যারিস দম্পত্তির বিচ্ছেদ হয়ে যাবার পরে ২০০৮ সালের মে মাসে এটি ১৫ মিলিয়ন ডলারে নিলামে বিক্রি হয়ে যায়।[৩] তবে দরদাতা চুক্তির শর্ত ভঙ্গ করলে বিক্রি স্থগিত থাকে।[৫] অক্টোবরে এসে ১২.৯৫ ডলারে বিক্রি হয়।[৬]

মার্মল রেজিনার এসোসিয়েটেসের পুন:স্থাপন কাজ বেশ আলোড়ন তৈরী করে।[২] বর্তমানে অনেক সমালোচকই ফলিংওয়াটার, রুবি হাউজ, গ্রপিয়ার হাউজ এবং গ্যাম্বেল হাউজের মত অভিজাত স্থাপত্য কর্মের সাথে কফম্যান ডেজার্ট হাউজকেও একই কাতারে স্থান দিয়ে থাকেন।টেমপ্লেট:যাচাই প্রয়োজন

২০০৮ সালের ডিসেম্বরে লস এঞ্জলেস টাইমস একটি জরিপের উপর ভিত্তি করে লস এঞ্জলেসের সর্বকালের সেরা ১০টি বাড়ির তালিকা তৈরী করে। ডেজার্ট হাউজের অবস্থান পাম স্প্রিংয়ে হলেও এই তালিকায় অন্তর্ভুক্ত হয়।[৭]

ডিজাইন[সম্পাদনা]

ডেজার্ট হাউজ স্থপতি নেওত্রার সর্বশেষ গৃহস্থালী স্থাপত্য কর্ম। ভবনের কাঠামো যেভাবে রুক্ষতার সাথে সযোগ স্থাপন করেছে তা অভূতপূর্ব। কৃত্রিম জলাধারের বাড়িকে জড়িয়ে ধরে থাকা মরুভূমিতে বেঁচে থাকার উপায়কে ইঙ্গিত করে।[৮] মরুভূমির রুক্ষতা থেকে নিজেকে নিরাপদে রেখেও মরু প্রকৃতির সুবিধাগুলো যেমন আলোকে ব্যবহার করেছেন। ডেজার্ট হাউজের স্থাপত্য একটি বিশেষ ধরনের নান্দনিক ও ভারকাঠামো ব্যবস্থা অনুসরন করেছে। একটি আনুভূমিক তল আরেকটি আনুভূমিক তলকে আশ্রয় করে স্বচ্ছ দেয়ালের উপরে অনেকটা ভেসে আছে-ইতিহাসবিদ ম্যাকাও এভাবেই সারমর্ম করেছিলেন কফম্যান হাউজকে বোঝাতে যেয়ে। অন্য সব বস্তর গুরুত্ব কমিয়ে দিয়ে কয়েকটি পাথুরে দেয়ালই মুখ্য হয়ে উঠেছে। বাড়ির আসল অবস্থান হয়েছে ওজনহীন পরিসরের মতো।[৯]

তথ্যসূত্র[সম্পাদনা]

  1. Judith Gura (মে ১, ২০০৮)। "Richard Neutra's Kaufmann House"। ARTINFO। সংগ্রহের তারিখ ২০০৮-০৫-১৪ 
  2. Edward Wyatt, A Landmark Modernist House Heads to Auction, The New York Times, October 31, 2007.
  3. Willian Avila, Kaufmann House sells for $15 million, The Desert Sun, May 14, 2008
  4. "Harris Pool House"Marmol Radziner। সংগ্রহের তারিখ ১২ জুলাই ২০১২ 
  5. Newman, Morris (মে ২০০৯)। "Revisiting the Kaufmann House"Palm Springs Life 
  6. Diane Wedner (২০০৮-১০-২৬)। "Neutra's Modernist masterpiece"Home of the Week। Los Angeles Times। সংগ্রহের তারিখ ২০০৮-১০-২৮ 
  7. Mitchell, Sean (ডিসেম্বর ২৭, ২০০৮)। "The best houses of all time in L.A."। Los Angeles Times। সংগ্রহের তারিখ ২০০৮-১২-২৭ 
  8. https://www.latimes.com/home/la-hm-besthouse27-pg-photogallery.html
  9. Esther McCoy. Richard Neutra. p16-17.

আরও দেখুন[সম্পাদনা]

বহিঃসংযোগ[সম্পাদনা]