চিত্ত যেথা ভয়শূন্য

উইকিপিডিয়া, মুক্ত বিশ্বকোষ থেকে

চিত্ত যেথা ভয়শূন্য (ইংরেজি: Where the mind is without fear, প্রতিবর্ণীকৃত: Chitto Zetha Bhoyshunyo) হলো রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের লেখা একটি কবিতা। এটি রবীন্দ্রনাথের একটি নতুন এবং জাগ্রত ভারত সম্পর্কে দৃষ্টিভঙ্গির প্রতিনিধিত্ব করে। মূল কবিতাটি ১৯১০ সালে প্রকাশিত হয় এবং ১৯১০ সালের গীতাঞ্জলিতে সংগ্রহ করা হয় এবং ১৯১২ সাল রবীন্দ্রনাথের নিজের অনুবাদ ইংরেজি সংস্করণে অন্তর্ভুক্ত করা হয়। গীতাঞ্জলি কাব্যগ্রন্থের জনপ্রিয় কবিতাগুলির মধ্যে এটি অন্যতম।

বাংলা পাঠ্য[সম্পাদনা]

   চিত্ত যেথা ভয়শূন্য, উচ্চ যেথা শির,
    জ্ঞান যেথা মুক্ত, যেথা গৃহের প্রাচীর
    আপন প্রাঙ্গণতলে দিবসশর্বরী
    বসুধারে রাখে নাই খণ্ড ক্ষুদ্র করি,
    যেথা বাক্য হৃদয়ের উৎসমুখ হতে
    উচ্ছ্বসিয়া উঠে, যেথা নির্বারিত স্রোতে
    দেশে দেশে দিশে দিশে কর্মধারা ধায়
    অজস্র সহস্রবিধ চরিতার্থতায়,
    যেথা তুচ্ছ আচারের মরুবালুরাশি
    বিচারের স্রোতঃপথ ফেলে নাই গ্রাসি,
    পৌরুষেরে করে নি শতধা, নিত্য যেথা
    তুমি সর্ব কর্ম চিন্তা আনন্দের নেতা,
    নিজ হস্তে নির্দয় আঘাত করি, পিতঃ;
    ভারতেরে সেই স্বর্গে করো জাগরিত॥

ইতিহাস ও অনুবাদ[সম্পাদনা]

এই কবিতা সম্ভবত ১৯০০ সালে রচনা করা হয়েছিল। কবিতাটি "প্রার্থনা" (জুলাই ১৯০১, বাংলায় ১৩০৮ বঙ্গাব্দে) শিরোনামে নৈবেদ্য শীর্ষকে প্রদর্শিত হয়েছিল। ইংরেজি অনুবাদটি ১৯১১ সালের মধ্যে রচনা করা হয়েছিল, উইলিয়াম রত্তেনস্টাইনের অনুরোধের পর রবীন্দ্রনাথ নিজের কাজের কিছু কবিতা ইংরেজিতে অনুবাদ করেছিলেন। ১৯১২ সালে লন্ডনের ইন্ডিয়ান সোসাইটি দ্বারা প্রকাশিত ইংরেজি গীতাঞ্জলিতে এটি ৩৫ তম কবিতা হিসেবে আবির্ভূত হয়।[১] ১৯১৭ সালে রবীন্দ্রনাথ কলকাতায় ভারতীয় জাতীয় কংগ্রেসের অধিবেশনে ইংরেজি আনুবাদটি (পরে খেতাবধারী 'ভারতীয় প্রার্থনা') পাঠ করেন।[২]

ইংরেজি গীতাঞ্জলি জন্য ঠাকুরের অনুবাদের বেশিরভাগ ইংরেজি উপস্থাপনার প্রায় প্রতিটি লাইন যথেষ্ট সরলীকৃত হয়েছে। ইংরেজি সংস্করণে ৬ তম লাইন  মানুষের কল্যাণের একটি তথ্য বাদ দেয় (জনসাধারণ, পুরাতন শাষ), এবং মূলের কঠোর পরিসমাপ্তি ঘটে, যেখানে পিতা দ্বারা "নিদ্রা ছাড়াই ঘুমিয়ে থাকা জাতিকে আঘাত করা" হয়েছে।

এই কবিতা প্রায়ই ভারতের পাঠ্যপুস্তকগুলিতে প্রদর্শিত হয় এবং বাংলাদেশেও জনপ্রিয়। এই গানের একটি সিংহলী অনুবাদ "গে ডিসায়া অয়াধি কারানু মেনা পিয়াননি" নামে, যা মহাগমা সেকারা দ্বারা সিংহলী অনুবাদ করা হয়েছিল।

জনপ্রিয় সংস্কৃতিতে[সম্পাদনা]

এই কবিতাটি বাঙালি তথা ভারতীয় উপমহাদেশের সংস্কৃতিকে যথেষ্ট প্রভাবিত করেছে। এ.আর. রহমান ২০১৩ সালে 'জগাও মেরে দেশ কো' নামে একটি ভারতীয় স্বাধীনতা দিবসের গান রচনা করেন এই কবিতাটির উপর ভিত্তি করে যা কাইম মিউজিক কনজার্ভরিটি একটি কাহিনীসহ কবিতা প্রদর্শন করে। এমটিভি কোক স্টুডিও থেকে ২০১৩ সালে গানটি দেখানো হয়েছিল।[৩]

আমির খান টেলিভিশন অনুষ্ঠান সত্যমেব জয়তের শেষ পর্বে কবিতাটির হিন্দি সংস্করণটি অনুবাদ করেছেন।[৪]

জন আব্রাহামের সিনেমা মাদ্রাজ ক্যাফে'তে মধ্যে কবিতাটির  ইংরেজি সংস্করণ ঊপস্থিত।

কবিতাটি ২০১৩ সালে শ্রীজিত মুখোপাধ্যায় পরিচালিত বাংলা চলচ্চিত্র মিশরে রহশ্যেও ব্যবহার করা হয়; কাকাবাবু নামক কল্পবিজ্ঞানের চরিত্রটি সুনীল গঙ্গোপাধ্যায় লিখেছেন।

এই কবিতা উপর ভিত্তি করে প্রগতিশীল রক ব্যান্ড সিনিস্টার সিম্ফনি তাদের গান 'ইন টু হে হেভেন' লিখেছে। ইমোজেন হিপ এবং বৈশাল-শেখার চিত্ত যেথা ভয়শূন্য উপর ভিত্তি করে "মাইন্ডস ইউথাউট ফেয়ার" রচনা করেন। এটি দ্য ডুয়ার্সস্টের প্রথম মৌসুমের প্রথম পর্বে তুলে ধরা হয়েছে।

২০১০ সালে ভারতীয় সংসদের ভাষণে যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামা এই কবিতার লাইন উদ্ধৃত করেছেন।[৫]

আরও দেখুন[সম্পাদনা]

তথ্যসূত্র[সম্পাদনা]

  1. Sisir Kumar Das, সম্পাদক (১৯৯৪)। The English Writings of Rabindranath Tagore, v.1: PoemsSahitya Akademi  p. 9
  2. Prabhat Kumar Mukhopadhyay, rabIndrajIbanIkathA, 1981, p.104
  3. "সংরক্ষণাগারভুক্ত অনুলিপি"। ৫ মার্চ ২০১৬ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২০ মার্চ ২০১৮ 
  4. "- YouTube"www.youtube.com। সংগ্রহের তারিখ ২০২২-০৩-১৩ 
  5. "Business News Today: Read Latest Business news, India Business News Live, Share Market & Economy News"The Economic Times (ইংরেজি ভাষায়)। সংগ্রহের তারিখ ২০২২-০৩-১৩ 

বহিঃসংযোগ[সম্পাদনা]