জিল্লুর রহমান

উইকিপিডিয়া, মুক্ত বিশ্বকোষ থেকে
জিল্লুর রহমান
বাংলাদেশের রাষ্ট্রপতি
কাজের মেয়াদ
১২ ফেব্রুয়ারি ২০০৯ – ২০ মার্চ ২০১৩
প্রধানমন্ত্রীশেখ হাসিনা
পূর্বসূরীইয়াজউদ্দিন আহম্মেদ
উত্তরসূরীআবদুল হামিদ
এলজিআরডি মন্ত্রী
কাজের মেয়াদ
২৩ জুন ১৯৯৬ – ১৫ জুলাই ২০০১
পূর্বসূরীআব্দুস সালাম তালুকদার
উত্তরসূরীআব্দুল মান্নান ভূঁইয়া
ময়মনসিংহ-৩২ আসনের সংসদ সদস্য
কাজের মেয়াদ
৭ মার্চ ১৯৭৩ – ৬ নভেম্বর ১৯৭৬
কিশোরগঞ্জ-৭ আসনের সংসদ সদস্য
কাজের মেয়াদ
৭ মে ১৯৮৬ – ৩ মার্চ ১৯৮৮
কাজের মেয়াদ
১২ জুন ১৯৯৬ – ২৯ অক্টোবর ২০০৬
পূর্বসূরীআব্দুল লতিফ ভূঁইয়া
উত্তরসূরীআবু বকর ছিদ্দিক
কিশোরগঞ্জ-৬ আসনের সংসদ সদস্য
কাজের মেয়াদ
২৯ ডিসেম্বর ২০০৮ – ১২ ফেব্রুয়ারি ২০০৯
পূর্বসূরীমুজিবুর রহমান মঞ্জু
উত্তরসূরীনাজমুল হাসান পাপন
ব্যক্তিগত বিবরণ
জন্ম(১৯২৯-০৩-০৯)৯ মার্চ ১৯২৯
ভৈরব, কিশোরগঞ্জ, ব্রিটিশ ভারত (বর্তমান বাংলাদেশ)
মৃত্যু২০ মার্চ ২০১৩(2013-03-20) (বয়স ৮৪)
মাউন্ট এলিজাবেথ হাসপাতাল, সিঙ্গাপুর
সমাধিস্থলবনানী কবরস্থান, ঢাকা[১]
জাতীয়তাবাংলাদেশি
রাজনৈতিক দলবাংলাদেশ আওয়ামী লীগ
দাম্পত্য সঙ্গীআইভি রহমান (১৯৫৮-২০০৪)
সন্তাননাজমুল হাসান পাপন
তানিয়া
ময়না
শিক্ষাস্নাতকোত্তর (ইতিহাস)
প্রাক্তন শিক্ষার্থীঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়

জিল্লুর রহমান (জন্ম: ৯ মার্চ, ১৯২৯ - মৃত্যু: ২০ মার্চ, ২০১৩) বাংলাদেশের সাবেক রাষ্ট্রপতিবাংলাদেশ আওয়ামী লীগের বিশিষ্ট রাজনীতিবিদ[২] ১৯৫২ সালের বাংলা ভাষা আন্দোলন থেকে শুরু করে এ যাবৎ দেশের সবকয়টি আন্দোলনে তিনি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেন।[তথ্যসূত্র প্রয়োজন] তিনি মুক্তিযুদ্ধে সক্রিয় অংশগ্রহণ করেন। ২০০৯ সালের ১২ ফেব্রুয়ারি প্রধান বিচারপতি এম এম রহুল আমিন তাকে বাংলাদেশের ১৯তম[৩] রাষ্ট্রপতি হিসেবে বঙ্গভবনে শপথ বাক্য পাঠ করান।[৪]

প্রারম্ভিক জীবন[সম্পাদনা]

১৯৭৩ সালে পূর্ব জার্মানিতে জিল্লুর রহমান

১৯২৯ সালের ৯ মার্চ জিল্লুর রহমান কিশোরগঞ্জ জেলার ভৈরবে জন্মগ্রহণ করেন।[৩] তার বাবা মেহের আলী মিঞা ছিলেন একজন আইনজীবী, তৎকালীন ময়মনসিংহের লোকাল বোর্ডের চেয়ারম্যান এবং জেলা বোর্ডের সদস্য।[৫] তার স্ত্রী আইভি রহমানও বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের একজন রাজনীতিবিদ ছিলেন। ২০০৪ সালের ২১ আগস্ট রাজধানী ঢাকার বঙ্গবন্ধু এভিনিউয়ে আওয়ামী লীগের সমাবেশে গ্রেনেড হামলায় জিল্লুর রহমান তার সহধর্মিনী ও মহিলা আওয়ামী লীগের তৎকালীন সভানেত্রী আইভি রহমানকে হারান। পারিবারিক জীবনে তিনি বর্তমান সংসদ সদস্যবাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ডের বর্তমান সভাপতি নাজমুল হাসান পাপনের নামে এক পুত্র এবং তানিয়া ও ময়না নামে দুই কন্যা সন্তানের জনক।

শিক্ষাজীবন[সম্পাদনা]

তার বাড়ীর পাশের ভৈরব আদর্শ প্রাথমিক বিদ্যালয়ে তার প্রাথমিক শিক্ষা শুরু হয়। এখান থেকে পাশ করে ১৯৪১ সালে তিনি ভৈরব কে.বি পাইলট মডেল হাই স্কুলে চলে যান। সেখান থেকে মাধ্যমিক পাশ করেন ১৯৪৬ সালে। তারপর ঢাকা কলেজ থেকে তিনি আইএ পাশ করেন। জিল্লুর রহমান ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় হতে ইতিহাস বিষয়ে স্নাতকোত্তর ডিগ্রি লাভ করেন। একই বিশ্ববিদ্যালয় হতে তিনি আইন বিষয়ে স্নাতক ডিগ্রি লাভ করেন।[৬]

রাজনৈতিক জীবন[সম্পাদনা]

জিল্লুর রহমান ১৯৫৪ সালে যুক্তফ্রন্টের নির্বাচনে বৃহত্তর ময়মনসিংহ জেলা নির্বাচন পরিচালনা কমিটির ভাইস চেয়ারম্যান ছিলেন। ১৯৫৬ সালে কিশোরগঞ্জ আওয়ামী লীগের সভাপতি নির্বাচিত হন। কিশোরগঞ্জ আওয়ামী লীগের প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি ছাড়াও জিল্লুর রহমান আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক, সভাপতিমণ্ডলীর সদস্যসহ বিভিন্ন সময়ে দলের গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্বে ছিলেন। ১৯৬২ সালে সামরিক শাসন বিরোধী আন্দোলন, ১৯৬৬ সালের ৬ দফা আন্দোলন, ১৯৬৯ সালের গণঅভ্যুত্থানসহ বিভিন্ন গণ-আন্দোলনে সক্রিয় অংশগ্রহণ করেন।[৫] ১৯৭০ সালে তিনি পাকিস্তান জাতীয় পরিষদের সদস্য (এমএনএ) নির্বাচিত হন। ১৯৭২ সালে জিল্লুর রহমান প্রথম আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত হন।[৬] পরবর্তীতে তিনি আবারো ১৯৭৪, ১৯৯২ ও ১৯৯৭ সালে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত হন। ৭২ সালে তিনি গণপরিষদ সদস্য হিসেবে সংবিধান প্রণয়নে অংশ নেন। ১৯৭৩ সালের প্রথম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে তিনি বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের প্রার্থী হিসেবে তৎকালীন ময়মনসিংহ-৩২ আসন থেকে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন।[৭] ১৯৭৫ সালে বাংলাদেশ কৃষক শ্রমিক আওয়ামী লীগের পলিটব্যুরো ও কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য নির্বাচিত হন।[৬] ১৯৮১ সাল থেকে তিনি আওয়ামী লীগ প্রেসিডিয়ামের দায়িত্ব পালন করেন।[৬]

৭ মে ১৯৮৬ সালের তৃতীয় ও ১২ জুন ১৯৯৬ সালের সপ্তম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে তিনি বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের প্রার্থী হিসেবে তৎকালীন কিশোরগঞ্জ-৭ আসন থেকে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন।[৮][৯] সপ্তম জাতীয় সংসদে তিনি স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রণালয় (এলজিআরডি) এর মন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন।

১ অক্টোবর ২০০১ সালের অষ্টম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে তিনি বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের প্রার্থী হিসেবে তৎকালীন কিশোরগঞ্জ-৭ আসন থেকে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন।[১০]

২০০৬ সালের ১১ জানুয়ারি তত্ত্বাবধায়ক সরকার দায়িত্ব নিলে যখন শেখ হাসিনা গ্রেফতার হন তারপর থেকেই তিনি বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের হাল ধরেন।

২৯ ডিসেম্বর ২০০৮ সালের নবম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে তিনি বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের প্রার্থী হিসেবে কিশোরগঞ্জ-৬ আসন থেকে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন।[১১]

বাংলাদেশের রাষ্ট্রপতি[সম্পাদনা]

২০০৮ সালের নবম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন ১৪-দলীয় মহাজোট বিপুল ভোটে জয়লাভ করে। জিল্লুর রহমান কিশোরগঞ্জ-৬ আসন থেকে পঞ্চমবারের মতো সংসদ সদস্য হন এবং জাতীয় সংসদে সংসদ উপনেতা নির্বাচিত হন। পরবর্তীতে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ তাঁকে রাষ্ট্রপতি নির্বাচনে প্রার্থী হিসেবে মনোনয়ন দেয়। তিনি বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় ২০০৯ সালে বাংলাদেশের ১৯তম রাষ্ট্রপতি হিসেবে নির্বাচিত হন এবং ১২ ফেব্রুয়ারি শপথ গ্রহণের মাধ্যমে দায়িত্ব গ্রহণ করেন।[৪] বাংলাদেশের ১৭তম রাষ্ট্রপতি ইয়াজউদ্দিন আহম্মেদের মেয়াদ ছিল ২০০৭ সালের ৫ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত। নবম সংসদ নির্বাচন বিলম্বিত হওয়ায় তার মেয়াদও দীর্ঘায়িত হয়।

দেহাবসান[সম্পাদনা]

দীর্ঘদিন রোগে আক্রান্ত হয়ে ১০ মার্চ, ২০১৩ তারিখে কিডনি ও মূত্রপ্রদাহে আক্রান্তজনিত কারণে উন্নত চিকিৎসার জন্য সিঙ্গাপুরের মাউন্ট এলিজাবেথ হাসপাতালে ভর্তি হন জিল্লুর রহমান।[১২] এর পূর্বদিন সম্মিলিত সামরিক হাসপাতালে ফুসফুসের সংক্রমণ ব্যাধিতে আক্রান্ত হয়ে চিকিৎসাধীন ছিলেন। ২০ মার্চ, ২০১৩ তারিখে তার দেহাবসান ঘটে।[১৩] সিঙ্গাপুরে নিযুক্ত বাংলাদেশের হাইকমিশনার মাহবুব উজ জামান স্থানীয় সময় ৬:৪৭ ঘটিকায় জিল্লুর রহমান মৃত্যুবরণ করেছেন বলে সংবাদ সম্মেলনে জানান। ঐ সময় তার সন্তানেরা সেখানে ছিলেন। তার মৃত্যুর পূর্বেই ১৪ মার্চ, ২০১৩ তারিখে জাতীয় সংসদের স্পিকার আবদুল হামিদ ভারপ্রাপ্ত রাষ্ট্রপতির দায়িত্ব গ্রহণ করেন। জিল্লুর রহমানের মৃত্যুতে বাংলাদেশে তিনদিনের রাষ্ট্রীয় শোক পালন করা হয়।[১৩] ২২ মার্চ নামাযে জানাযার পর বনানী কবরস্থানে তাকে দাফন করা হয়।[১]

বনানী গোরস্থানে জিল্লুর রহমানের কবর

আরও দেখুন[সম্পাদনা]

তথ্যসূত্র[সম্পাদনা]

  1. "আইভী রহমানের কবরেই চিরনিদ্রায় শায়িত হলেন রাষ্ট্রপতি মরহুম মোঃ জিল্লুর রহমান"দৈনিক সংগ্রাম। শনিবার, ২৩ মার্চ ২০১৩।  এখানে তারিখের মান পরীক্ষা করুন: |তারিখ= (সাহায্য)[স্থায়ীভাবে অকার্যকর সংযোগ]
  2. "রাষ্ট্রপতি জিল্লুর রহমান মারা গেছেন"বিবিসি বাংলা। ২০ মার্চ ২০১৩। 
  3. "অভিভাবক হারাল জাতি"। দৈনিক প্রথম আলো। ২১ মার্চ ২০১৩। ২০১৮-১২-০৬ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২০১৪-০১-০৩ 
  4. "রাষ্ট্রপতি জিল্লুর রহমান শপথ নিলেন"ডয়চে ভেলে। ১২ ফেব্রুয়ারি ২০০৯। 
  5. "প্রয়াত রাষ্ট্রপতি জিল্লুর রহমানের চতুর্থ মৃত্যুবার্ষিকী আজ"দৈনিক কালের কণ্ঠ। সংগ্রহের তারিখ ১ আগস্ট ২০১৭ 
  6. "রাজনীতির মহাপুরুষ প্রয়াত রাষ্ট্রপতি জিল্লুর রহমান"আরটিভিঅনলাইন.কম। ১৯ মার্চ ২০১৭। সংগ্রহের তারিখ ১ আগস্ট ২০১৭ 
  7. "১ম জাতীয় সংসদে নির্বাচিত মাননীয় সংসদ-সদস্যদের নামের তালিকা" (পিডিএফ)জাতীয় সংসদবাংলাদেশ সরকার। ৯ সেপ্টেম্বর ২০১৮ তারিখে মূল (পিডিএফ) থেকে আর্কাইভ করা। 
  8. "৩য় জাতীয় সংসদে নির্বাচিত মাননীয় সংসদ-সদস্যদের নামের তালিকা" (পিডিএফ)জাতীয় সংসদবাংলাদেশ সরকার। ১৮ সেপ্টেম্বর ২০১৮ তারিখে মূল (পিডিএফ) থেকে আর্কাইভ করা। 
  9. "৭ম জাতীয় সংসদে নির্বাচিত মাননীয় সংসদ-সদস্যদের নামের তালিকা" (পিডিএফ)জাতীয় সংসদবাংলাদেশ সরকার। ২৪ সেপ্টেম্বর ২০১৫ তারিখে মূল (পিডিএফ) থেকে আর্কাইভ করা। 
  10. "৮ম জাতীয় সংসদে নির্বাচিত মাননীয় সংসদ-সদস্যদের নামের তালিকা" (পিডিএফ)জাতীয় সংসদবাংলাদেশ সরকার। ১৮ সেপ্টেম্বর ২০১৮ তারিখে মূল (পিডিএফ) থেকে আর্কাইভ করা। 
  11. "৯ম জাতীয় সংসদে নির্বাচিত মাননীয় সংসদ-সদস্যদের নামের তালিকা"জাতীয় সংসদবাংলাদেশ সরকার। ২০১৬-১১-২৭ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২০২০-০৯-০৮ 
  12. "সিঙ্গাপুরে নেয়া হল রাষ্ট্রপতিকে"রাইজিংবিডি.কম। ২০১৩-০৩-১০। 
  13. "রাষ্ট্রপতি জিল্লুর রহমান আর নেই"দৈনিক ইত্তেফাক। ২০ মার্চ ২০১৩। 

বহিঃসংযোগ[সম্পাদনা]

পূর্বসূরী:
ইয়াজউদ্দিন আহম্মেদ
বাংলাদেশের রাষ্ট্রপতি
১২ ফেব্রুয়ারি, ২০০৯-২০ মার্চ, ২০১৩
উত্তরসূরী:
আবদুল হামিদ
(ভারপ্রাপ্ত)