বাংলা ও মুর্শিদাবাদের নবাবগণ

উইকিপিডিয়া, মুক্ত বিশ্বকোষ থেকে
বাংলা, বিহার ও উড়িষ্যার নবাব নাজিম (১৭১৭–১৮৮০)[১]
মুর্শিদাবাদের নবাব বাহাদুর (১৮৮২–১৯৫০)[২]

বাংলা ও মুর্শিদাবাদের নবাব
১৭১৭–১৭৬৫
বাংলা ও মুর্শিদাবাদের নবাবগণের জাতীয় পতাকা
পতাকা
নীতিবাক্য: Nil Desparandum
“হতাশার কোনো কারণ নেই”
বাংলা ও মুর্শিদাবাদের নবাবগণের অবস্থান
রাজধানীমুর্শিদাবাদ[৩]
প্রচলিত ভাষাফার্সি (রাজভাষা)
বাংলা (গণভাষা)
আরবি (ধর্মীয় ভাষা)
ধর্ম
শিয়া ইসলাম (রাজবংশ)[১][২][৩]
সুন্নি ইসলাম (সংখ্যাগুরু)
সরকাররাজতন্ত্র
বাংলার নবাব 
• প্রথম নবাব
মুর্শিদ কুলি খান
• শেষ নবাব
মির্জা মুহম্মদ সিরাজউদ্দৌলা
ঐতিহাসিক যুগমুগল যুগ
ব্রিটিশ যুগ
স্বাধীন ভারতীয় যুগ
১৫৭৬
• প্রতিষ্ঠা
১৭১৭
২৩ জুন ১৭৫৭
২২ অক্টোবর ১৭৬৪
• বিলুপ্ত
১৭৬৫
জনসংখ্যা
• ১৯০১
৭৫ মিলিয়ন[৪]
মুদ্রা
পূর্বসূরী
উত্তরসূরী
মুঘল সাম্রাজ্য
ভারতে কোম্পানি শাসন
ব্রিটিশ রাজ
বর্তমানে যার অংশ ভারত
 বাংলাদেশ
  1. ^ ১৮৮০ সালে উপাধি বিলুপ্ত
  2. ^
    ১৭৪৭ সালে ভারতের স্বাধীনতার পর ১৯৫০ সালের ২৬ জানুয়ারি ভারতের সংবিধান প্রবর্তনের ফলে, যা ভারতীয় অধিরাজ্যকে ভারতীয় প্রজাতন্ত্রে রূপান্তরিত করে, ভারতীয় সংবিধানের ১৮শ অনুচ্ছেদ সমস্ত উপাধি বাতিল করে দেয়, কেবল ভারত সরকার কর্তৃক সামরিক ও একাডেমিক ক্ষেত্রে ছাপ রাখার জন্য প্রদত্ত উপাধিসমূহ ছাড়া। এইভাবে “মুর্শিদাবাদের নবাব বাহাদুর” উপাধিটি আনুষ্ঠানিক, সাংবিধানিক ও আইনগতভাবে বিলুপ্ত হয়।
  3. ^
    মুর্শিদাবাদ ছিল বাংলার নবাব ও মুর্শিদাবাদের নবাব উভয়ের রাজধানী।

বাংলার নবাবগণ ছিলেন সম্পূর্ণ রূপ বাংলা-বিহার-উড়িষ্যার নওয়াবে নিজাম। মুঘল আমলে যারা সুবাহ বাংলার প্রাদেশিক শাসক ছিলেন। ১৭১৭ থেকে ১৭৫৭ সাল পর্যন্ত তারা সার্বভৌম বাংলার প্রধান হিসেবে এই অঞ্চল শাসন করেছেন। পদটি মুঘল আমলে পুরুষানুক্রমিকভাবে নাজিম ও সুবেদার থেকে সৃষ্টি হয়েছিল এবং পরবর্তীতে তারা সংশ্লিষ্ট অঞ্চলসমূহে স্বাধীনভাবে শাসন করেছিলেন।[৫] বাংলার শেষ স্বাধীন নবাব সিরাজদ্দৌলা পলাশীর যুদ্ধে মীরজাফর কর্তৃক বিশ্বাসঘাতকতার স্বীকার হন, ফলে সিরাজ-উদ-দৌলা পলাশীর যুদ্ধে হারার মাধ্যমে বাংলার শেষ স্বাধীন নবাবে পরিণত হন ৷ তিনি ব্রিটিশদের কাছে পরাজিত হন যারা ১৭৫৭ সালে বাংলা অধিগ্রহণ করে মীর জাফরকে ক্ষমতায় বসান এবং একটি রাজনৈতিক ধারা প্রবর্তন করেন।[৬]

১৭৬৫ সালে দ্বৈত সরকার ব্যবস্থা প্রবর্তন করা হয় যেখানে নবাবগণ ব্রিটিশদের অধীণে শাসন করতেন এবং তারা ব্রিটিশদের হাতের পুতুল ছিলেন। ১৭৭২ সালে ধারাটি বিলুপ্ত ঘোষণা করে শাসন ব্যবস্থা সরাসরি ব্রিটিশদের অধীনে নেওয়া হয়। ১৭৯৩ সালে নবাবদের কাছ থেকে নিজামত (গভর্নর) অধিকারও প্রত্যাহার করা হয়, তখন তাদের ব্রিটিশ ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানি থেকে শুধু সামান্য অবসরকালীন ভাতা দেওয়া হত।[৭][৮] বাংলার শেষ নবাব মনসুর আলী খান ১৮৮০ সালের ১লা নভেম্বর তার জ্যেষ্ঠ পুত্রের জন্য ক্ষমতা থেকে পদত্যাগ করেন।[৯]

মনসুর আলী খানের পদত্যাগের পর মুর্শিদাবাদের নবাব ও বাংলার নবাব, মুর্শিদাবাদের নবাব বাহাদুর হিসেবে পরিচিতি পান[৫][৯][১০] যেহেতু ১৮৮০ সালে বাংলার নবাব উপাধিটি বিলুপ্ত হয়েছিল।[৫] সেসময় রাজস্ব আদায়ে তাদের খুবই কম বা অনেক ক্ষেত্রে কর্তৃত্ব ছিল না বললেই চলে এবং তারা বল প্রয়োগ থেকেও বিরত ছিল। ১৯৪৭ সালে ভারতের স্বাধীনতার পর রাজ্যসমূহের ভারত বা পাকিস্তানের অঙ্গীভূত হওয়ার বাধ্যবাধাকতা ছিল।[১১] এটা উল্লেখ করা যেতে পারে যে মুর্শিদাবাদ (রাজধানী শহর) দুদিনের জন্য পূর্ব পাকিস্তানের অঙ্গীভূত হয়েছিল, কারণ এখানে মুসলমান সংখ্যাগরিষ্ঠ ছিল। ১৯৪৭ সালের ১৭ই আগস্ট এটি ভারতের অঙ্গীভূত হয়।[১২] হাজারদুয়ারী প্রাসাদ থেকে পাকিস্তানের পতাকা নামিয়ে তেরঙা ভারতের পতাকা উত্তোলন করা হয়।[১২] ভারতের সাথে একত্রীত হওয়ার পর এসব রাজ্যসমূহের ক্ষমতা খর্ব হয়ে যায় কারণ ভারত সরকার সকল রাজ্যসমূহের কর্তৃত নিয়েছিল।[১১] ১৯৬৯ সালে শেষ নবাব ওয়ারিস আলী মির্জার সাথে সাথে নবাব উপাধিটিও ধীরে ধীরে বিলুপ্ত হয়ে যায়।[১৩] যদিও তিনি তিনজন ছেলে ও তিনজন মেয়ে রেখে গিয়েছিলেন কিন্তু তার মৃত্যুর পূর্বে কোন উত্তরাধীকারী ঘোষণা না করে যাওয়ার দরুন নবাব উপাধিটিও এখানেই সমাপ্তি ঘটে।[১৩]

বাংলার নবাবদের তালিকা[সম্পাদনা]

নিম্নের তালিকাটি বাংলার নবাবদের একটি তালিকা। সরফরাজ খান ও মীর মুহাম্মদ জাফর আলী খান বাহাদুর দুইবার করে বাংলার নবাব ছিলেন।[১৪] ধারাটি ১৭১৭ সালে মুর্শিদ কুলি খানের আমলে শুরু হয়েছিল এবং ১৮৮১ সালে মনসুর আলী খানের সাথে সাথে ধারাটি বিলুপ্ত হয়ে গিয়েছিল।[৫][৯][১৪]

প্রতিকৃতি উপাধি ব্যক্তিগত নাম জন্ম রাজত্ব মৃত্যু
নাসিরি রাজবংশ
জাফর খান বাহাদুর নাসিরি মুর্শিদ কুলি খান ১৬৬৫ ১৭১৭– ১৭২৭ জুন ৩০, ১৭২৭
আলা-উদ-দীন হায়দার জং সরফরাজ খান বাহাদুর ? ১৭২৭-১৭২৭ এপ্রিল ২৯, ১৭৪০
সুজা উদ-দৌলা সুজা উদ্দিন মুহাম্মদ খান ১৬৭০-এর সময়কাল (তারিখ পাওয়া যায়নি) জুলাই, ১৭২৭ – আগস্ট ২৬, ১৭৩৯ আগস্ট ২৬, ১৭৩৯
আলা-উদ-দীন হায়দার জং সরফরাজ খান বাহাদুর ? মার্চ ১৩, ১৭৩৯ – এপ্রিল ১৭৪০ এপ্রিল ২৯, ১৭৪০
আফসার রাজবংশ
হাশিম উদ-দৌলা মুহাম্মদ আলীবর্দী খাঁন বাহাদুর ১০ই মে-এর পূর্বে, ১৬৭১ এপ্রিল ২৯, ১৭৪০ – এপ্রিল ৯, ১৭৫৬ এপ্রিল ৯, ১৭৫৬
সিরাজদ্দৌলা মুহাদ্মদ সিরাজদ্দৌলা ১৭৩৩ এপ্রিল ১৭৫৬ – জুন ২, ১৭৫৭ জুলাই ২, ১৭৫৭
নাজাফি রাজবংশ
জাফর আলী খান বাহাদুর মীর মুহাম্মদ জাফর আলী খান বাহাদুর ১৬৯১ জুন ১৭৫৭ – আক্টোবর ১৭৬০ জানুয়ারি ১৭, ১৭৬৫
ইতিমাদ উদ-দৌলা মীর কাশিম আলী খান বাহাদুর ? অক্টোবর ২০, ১৭৬০ – ১৭৬৩ মে ৮, ১৭৭৭
জাফর আলী খান বাহাদুর মীর মুহাম্মদ জাফর আলী খান বাহাদুর ১৬৯১ জুলাই ২৫, ১৭৬৩ – জানুয়ারি ১৭, ১৭৬৫ জানুয়ারি ১৭, ১৭৬৫
নজম উদ-দৌলা নাজিম উদ্দিন আলী খান বাহাদুর ১৭৫০ ফেব্রুয়ারি ৫, ১৭৬৫ – মে ৮, ১৭৬৬ মে ৮, ১৭৬৬
সাইফ উদ-দৌলা নাজাবুত আলী খান বাহাদুর ১৭৪৯ মে ২২, ১৭৬৬ – মার্চ ১০, ১৭৭০ মার্চ ১০, ১৭৭০
মুবারক উদ-দৌলা আশরাফ আলী খান বাহাদুর ১৭৫৯ মার্চ, ১৭৭০ – সেপ্টেম্বর ৬, ১৭৯৩ সেপ্টেম্বর ৬, ১৭৯৩
আজাদ উদ-দৌলা বাবর আলী খান বাহাদুর ? ১৭৯৩ – এপ্রিল ২৮, ১৮১০ এপ্রিল ২৮, ১৮১০
আলী জা জাইন উদ্দিন আলী খান বাহাদুর ? জুন ৫, ১৮১০ – আগস্ট ৬, ১৮২১ আগস্ট ৬, ১৮২১
ওয়াল্লা জা আহমেদ আলী খান বাহাদুর ? ১৮১০ – আক্টোবর ৩০, ১৮২৪ আক্টোবর ৩০, ১৮২৪
হুমায়ুন জা মুবারক আলী খান বাহাদুর সেপ্টেম্বর ২৯, ১৮১০ ১৮২৪ – অক্টোবর ৩, ১৮৩৮ অক্টোবর ৩, ১৮৩৮
ফেরাদুন জা মনসুর আলী খান বাহাদুর অক্টোবর ২৯, ১৮৩০ অক্টোবর ২৯, ১৮৩৮ – নভেম্বর ১, ১৮৮০ (পদত্যাগ) নভেম্বর ৫, ১৮৮৪

মুর্শিদাবাদের নবাবদের তালিকা[সম্পাদনা]

১৮৮০ সালে বাংলার নবাব উপাধিটি বিলুপ্ত হওয়ার পর, ১৮৮১ সালে বাংলার নবাব পদটিও বিলুপ্ত হয়ে যায়। পরবর্তিতে মুর্শিদাবাদের নবাব উপাধিটি চালু হয়।[৫][৯] মুর্শিদাবাদের তিনজন নবাব ছিলেন, নিম্নে তাদের তালিকা দেওয়া হল:

প্রতিকৃতি উপাধি ব্যক্তিগত নাম জন্ম রাজত্ব মৃত্যু
নাজাফি রাজবংশ
আলী কাদির হাসান আলী মির্জা খান বাহাদুর আগস্ট ২৫, ১৮৪৬ ফেব্রুয়ারি ১৭, ১৮৮২ – ডিসেম্বর ২৫, ১৯০৬ ডিসেম্বর ২৫, ১৯০৬
আমীর উল-উমরা ওয়াসিফ আলী মির্জা খান বাহাদুর জানুয়ারি ৭, ১৮৭৫ ডিসেম্বর ১৯০৬–২৩শে অক্টোবর ১৯৫৯ ২৩শে অক্টোবর ১৯৫৯
রেইস উদ-দৌল্লা ওয়ারিস আলী মির্জা খান বাহাদুর নম্বের ১৪, ১৯০১ ১৯৫৯ – নভেম্বর ২০, ১৯৬৯ ( কোনো সুস্পষ্ট উত্তরাধিকারী ছিল না/শিরোনাম বিতর্কিত) নভেম্বর ২০, ১৯৬৯

তথ্যসূত্র ও টীকা[সম্পাদনা]

  1. K. K. Datta, Ali Vardi and His Times, University of Calcutta Press, (1939).
  2. Rizvi, Saiyid Athar Abbas (১৯৮৬)। A Socio-intellectual History of the Isnā ʼAsharī Shīʼīs in India: 16th to 19th century A.D2। Munshiram Manoharlal Publishers। পৃষ্ঠা 45–47। 
  3. Rieck, Andreas (১৫ জানুয়ারি ২০১৬)। The Shias of Pakistan: An Assertive and Beleaguered Minority। Oxford University Press। পৃষ্ঠা 3। আইএসবিএন 978-0-19-061320-4 
  4. Imperial Gazetteer of India vol. IV 1907, পৃ. 46
  5. উদ্ধৃতি ত্রুটি: <ref> ট্যাগ বৈধ নয়; nawab নামের সূত্রটির জন্য কোন লেখা প্রদান করা হয়নি
  6. Chaudhury, S; Mohsin, KM। "Sirajuddaula"Banglapedia। Asiatic Society of Bangladesh। ৫ জুন ২০১২ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ১৩ আগস্ট ২০১২ 
  7. Singh, Vipul (১ সেপ্টেম্বর ২০০৯)। Longman History & Civics (Dual Government in Bengal)। Pearson Education India। 
  8. Madhya Pradesh National Means-Cum-Merit Scholarship Exam (Warren Hasting's system of Dual Government)। Upkar Prakashan। ১ জানুয়ারি ২০০৯। 
  9. Murshidabad.net (মে ৮, ২০১২)। "Decline of the Nawabs of Bengal"। ২ সেপ্টেম্বর ২০১২ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ১০ আগস্ট ২০১২ 
  10. Murshidabad.net (৮ মে ২০১২)। "Hassan Ali Mirza's succession"। ১ সেপ্টেম্বর ২০১৬ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ১০ আগস্ট ২০১২ 
  11. Lumby 1954, পৃ. 232
  12. "Murshidabad was a part of East Pakistan (now Bangladesh) for two days after which it became a part of India"। 30-days.net। সংগ্রহের তারিখ ১৪ আগস্ট ২০১২ [স্থায়ীভাবে অকার্যকর সংযোগ]
  13. "The last Nawab of Murshidabad, Waris Ali Mirza Khan Bahadur"। ২৪ আগস্ট ২০১২ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ১০ আগস্ট ২০১২ 
  14. "The Nawabs of Bengal (chronologically)"। ৬ জানুয়ারি ২০১২ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ জুলাই ২৮, ২০১২ 

বহিঃসংযোগ[সম্পাদনা]