ভারতের খেলাধুলা

উইকিপিডিয়া, মুক্ত বিশ্বকোষ থেকে
(ভারতের খেলাধূলা থেকে পুনর্নির্দেশিত)
ওনামের সময় বার্ষিক সর্প নৌকা প্রতিযোগিতা চলছে পাথানমথিতার কাছে আরন্মুলার পাম্বা নদীতে

ভারতের খেলাধুলার মধ্যে রয়েছে ক্রিকেট, ফুটবল, ফিল্ড হকি, টেনিস, গলফ, কবাডি ও দাবাক্রিকেট সর্বাপেক্ষা জনপ্রিয় খেলা।

অলিম্পিকে ভারত[সম্পাদনা]

১৯০০ সালে ভারত প্রথম অলিম্পিকে অংশ নেয়। সে বছর ভারতের একমাত্র প্রতিনিধি নর্মান প্রিচার্ড ২০০ মি. দৌড় ও ২০০মি. বাধাদৌড়ে রূপা জেতেন। তবে দলগত ভাবে ভারত প্রথম অংশ নেয় ১৯২০ সালের গ্রীষ্মকালীন অলিম্পিকে। অদ্যাবধি ভারত মোট ২০টি অলিম্পিক পদক জিতেছে।ভারতীয় ছেলেদের ফিল্ড হকি দল ১৯২৮ সালের আমস্টারডাম অলিম্পিকে প্রথম সোনা জেতে। অভিনব বিন্দ্রা প্রথম ব্যক্তিগত সোনা জেতেন ২০০৮ সালের বেজিং অলিম্পিকে, যা কিনা ১৯৮০ সালে ছেলেদের ফিল্ড হকি দলের জেতা সোনার পর ভারতের প্রথম সোনা।

উল্লেখ্য, ১০০কোটিরও বেশি জনসংখ্যা হওয়া সত্বেও অলিম্পিকে ভারতের পদক সংখ্যা ভীষণই কম। ভারতের জনসংখ্যার প্রায় অর্ধেকের বয়স ২৫বছরের কম হওয়া সত্বেও এই ফলের কারণ হিসাবে বলা হয়, দারিদ্র, অপুষ্টি, অবহেলিত পরিকাঠামো, স্পনসরের অভাব, অর্থ ও সরঞ্জামের চুরি,রাজনৈতিক দুর্নীতি, ক্রিকেটের জনপ্রিয়তা ও অন্যান্য কারণ।

অনেক পরিসংখ্যানমতে, মাথাপিছু অলিম্পিক পদকের হিসাবে ভারত বিশ্বের শেষতম দেশ। আবার অন্য আর একটি হিসাবে, ভারত ভিয়েতনামের আগে আছে।

পদক তালিকা[সম্পাদনা]

পদক নাম / দল গেমস খেলা ইভেন্ট
 রৌপ্য নরম্যান প্রিচার্ড ১৯০০ প্যারিস অ্যাথলেটিকস অ্যাথলেটিকস পুরুষদের ২০০ মিটার
 রৌপ্য নরম্যান প্রিচার্ড অ্যাথলেটিকস অ্যাথলেটিকস পুরুষদের ২০০ মিটার হার্ডল
 স্বর্ণ ভারত জাতীয় ফিল্ড হকি দল ১৯২৮ আমস্টারডাম ফিল্ড হকি ফিল্ড হকি পুরুষদের প্রতিযোগিতা
 স্বর্ণ ভারত জাতীয় ফিল্ড হকি দল ১৯৩২ লস এঞ্জেলস ফিল্ড হকি ফিল্ড হকি পুরুষদের প্রতিযোগিতা
 স্বর্ণ ভারত জাতীয় ফিল্ড হকি দল ১৯৩৬ বার্লিন ফিল্ড হকি ফিল্ড হকি পুরুষদের প্রতিযোগিতা
 স্বর্ণ ভারত জাতীয় ফিল্ড হকি দল ১৯৪৮ লন্ডন ফিল্ড হকি ফিল্ড হকি পুরুষদের প্রতিযোগিতা
 স্বর্ণ ভারত জাতীয় ফিল্ড হকি দল ১৯৫২ হেলসিঙ্কি ফিল্ড হকি ফিল্ড হকি পুরুষদের প্রতিযোগিতা
 ব্রোঞ্জ খাসাবা দাদাসাহেব যাদব কুস্তি কুস্তি পুরুষদের ফ্রিস্টাইল ব্যান্টামওয়েট
 স্বর্ণ ভারত জাতীয় ফিল্ড হকি দল ১৯৫৬ মেলবোর্ন ফিল্ড হকি ফিল্ড হকি পুরুষদের প্রতিযোগিতা
 রৌপ্য ভারত জাতীয় ফিল্ড হকি দল ১৯৬০ রোম ফিল্ড হকি ফিল্ড হকি পুরুষদের প্রতিযোগিতা
 স্বর্ণ ভারত জাতীয় ফিল্ড হকি দল ১৯৬৪ টোকিও ফিল্ড হকি ফিল্ড হকি পুরুষদের প্রতিযোগিতা
 ব্রোঞ্জ ভারত জাতীয় ফিল্ড হকি দল ১৯৬৮ মেক্সিকো ফিল্ড হকি ফিল্ড হকি পুরুষদের প্রতিযোগিতা
 ব্রোঞ্জ ভারত জাতীয় ফিল্ড হকি দল ১৯৭২ মিউনিখ ফিল্ড হকি ফিল্ড হকি পুরুষদের প্রতিযোগিতা
 স্বর্ণ ভারত জাতীয় ফিল্ড হকি দল ১৯৮০ মস্কো ফিল্ড হকি ফিল্ড হকি পুরুষদের প্রতিযোগিতা
 ব্রোঞ্জ লিয়েন্ডার পেজ ১৯৯৬ আটলান্টা টেনিস টেনিস পুরুষদের সিঙ্গলস
 ব্রোঞ্জ কর্ণম মালেশ্বরী ২০০০ সিডনি ভারোত্তোলন ভারোত্তোলন মহিলাদের ৬৯ কেজি
 রৌপ্য রাজ্যবর্ধন সিং রাঠোর ২০০৪ এথেন্স শ্যুটিং শ্যুটিং পুরুষদের ডাবল ট্র্যাপ
 স্বর্ণ অভিনব বিন্দ্রা ২০০৮ বেইজিং শ্যুটিং শ্যুটিং পুরুষদের ১০ মিটার এয়ার রাইফেল
 ব্রোঞ্জ বিজেন্দর সিং বক্সিং বক্সিং পুরুষদের ৭৫ কেজি
 ব্রোঞ্জ সুশীল কুমার কুস্তি কুস্তি পুরুষদের ৬৬ কেজি ফ্রিস্টাইল
 ব্রোঞ্জ গগন নারং ২০১২ লন্ডন শ্যুটিং শ্যুটিং পুরুষদের ১০ মিটার এয়ার রাইফেল
 রৌপ্য বিজয় কুমার শ্যুটিং শ্যুটিং পুরুষদের ২৫ রাপিড ফায়ার পিস্তল
 ব্রোঞ্জ সাইনা নেহওয়াল ব্যাডমিন্টন ব্যাডমিন্টন মহিলাদের সিঙ্গলস
 ব্রোঞ্জ মেরি কম বক্সিং বক্সিং মহিলাদের ফ্লাইওয়েট
 ব্রোঞ্জ যোগেশ্বর দত্ত কুস্তি কুস্তি পুরুষদের ৬০ কেজি ফ্রিস্টাইল
 রৌপ্য সুশীল কুমার কুস্তি কুস্তি পুরুষদের ৬৬ কেজি ফ্রিস্টাইল
 ব্রোঞ্জ সাক্ষী মালিক ২০১৬ রিও দি জেনেরিও কুস্তি কুস্তি মহিলাদের ৫৮ কেজি ফ্রিস্টাইল
 রৌপ্য পি ভি সিন্ধু ব্যাডমিন্টন ব্যাডমিন্টন মহিলাদের সিঙ্গলস
 স্বর্ণ নিরজ চোপড়া ২০২০ টোকিও অ্যাথলেটিকস অ্যাথলেটিকস পুরুষদের বর্শা নিক্ষেপ
 রৌপ্য সাঁইখোম মীরাবাই চানু ভারোত্তোলন ভারোত্তোলন মহিলাদের ৬৯ কেজি
 রৌপ্য রবি কুমার ডাহিয়া কুস্তি কুস্তি পুরুষদের ৫৭ কেজি ফ্রিস্টাইল
 ব্রোঞ্জ পি ভি সিন্ধু ব্যাডমিন্টন ব্যাডমিন্টন মহিলাদের সিঙ্গলস
 ব্রোঞ্জ লাভলিনা বরগোঁহাই বক্সিং বক্সিং মহিলাদের ওয়েলটার ওয়েট
 ব্রোঞ্জ ভারত জাতীয় ফিল্ড হকি দল ফিল্ড হকি ফিল্ড হকি পুরুষদের প্রতিযোগিতা
 ব্রোঞ্জ বজরং পুনিয়া কুস্তি কুস্তি পুরুষদের ৬৫ কেজি
  • ভারতীয় অলিম্পিক পরিষদ এই পদক ভারতের বলে দাবি করলেও, আন্তর্জাতীক পরিষদ একে গ্রেট ব্রিটেনের বলে মানে।

ভারতের বিভিন্ন খেলাধুলা[সম্পাদনা]

ক্রিকেট[সম্পাদনা]

চেন্নাই সুপার কিংস বনাম কোলকাতা নাইট রাইডার্সের খেলা চলছে এম. এ. চিদাম্বরম ক্রিকেট স্টেডিয়ামে ইন্ডিয়ান প্রিমিয়ার লীগের প্রথম বছরে। ক্রিকেট ভারতের সর্বাধিক জনপ্রিয় খেলা।

যদিও ফিল্ড হকি সরকারিভাবে ভারতের জাতীয় খেলা, কিন্তু ভারতের সবচেয়ে জনপ্রিয় খেলা হল ক্রিকেট। তার অন্যতম কারণ হল ভারতের বিভিন্ন রাজনৈতিক ও সামাজিক সমস্যা, যেমন, জাত-পাত, ধর্মীয় গোঁড়ামি, জাতীয়তাবাদী চেতনার বিকাশ ইত্যাদির বিবর্তনের প্রতিফলন পাওয়া যায় এই খেলার ইতিহাসে। আজ ভারত ক্রিকেটে বিশ্বের প্রথমসারির দেশগুলির মধ্যে পড়ে।

ডাংগুলি[সম্পাদনা]

পটলাকৃতির কাঠি (গুলি) ও একটি বড় লাঠির (ডাং) সাহায্যে এ খেলা খেলতে হয়। অনেকটা ক্রিকেটের মত খেলা যাতে বলের বদলে গুলি ব্যবহৃত হয়। রাজস্থান, উত্তর প্রদেশ, মধ্যপ্রদেশ ইত্যাদি রাজ্যের কমবয়সিদের মধ্যে দারুণ জনপ্রিয় খেলা।

মার্বেল[সম্পাদনা]

মার্বেল বা গুলিখেলা কাচের গুলি দিয়ে খেলা হয়। এটিও গ্রামাঞ্চলের কমবয়সিদের খেলা। সাধারণতঃ জয়ী বিজিতের গুলি পায়।

ঘুড়ি ওড়ানো[সম্পাদনা]

ভারতে ঘুড়ি ওড়ানো মুঘল আমল থেকে প্রচলিত। ভারতের সর্বত্র প্রচুর উৎসাহের সাথে ঘুড়ি ওড়ানো হয়। বিশেষ করে মকর সংক্রান্তির দিন ও কার্তিক পূজার দিন সার্বজনীন ভাবে ঘুড়ি ওড়ানো হয়।

ব্যাডমিন্টন[সম্পাদনা]

ব্যাডমিন্টনের সূচনা হয় ভারতেই। পূণায় ব্রিটিশ সেনাশিবিরে এই খেলা প্রথম শুরু হয়। তখন এর নাম ছিল পূণা[১][২] ভারতে যথেষ্ট জনপ্রিয় এই খেলা। তরুণ প্রতিভা সাইনা নেহওয়াল ২০১২ সালের গ্রীষ্মকালীন অলিম্পিকে এবং পি ভি সিন্ধু ২০১৬ সালের গ্রীষ্মকালীন অলিম্পিকে মহিলাদের একক প্রতিযোগিতায় যথাক্রমে রৌপ্য এবং ব্রোঞ্জ পদক লাভ করেন। এখনো পর্যন্ত বিশ্ব র‌্যাঙ্কিংয়ে সর্বোচ্চ ১ম স্থান অধিকার করেছেন সাইনা ২০১৫ সালে এবং সিন্ধু ২০১৭ সালে। এঁর আগে প্রকাশ পাড়ুকোনপুল্লেলা গোপিচন্দ অল-ইংল্যান্ড খেতাব জিতেছিলেন যথাক্রমে ১৯৮০ ও ২০০১ সালে।

ব্যান্ডি[সম্পাদনা]

হিমাচল প্রদেশের মান্ডি জেলায় ভারতীয় ব্যান্ডি ফেডারেশনের সদর দফতর অবস্থিত। উত্তর ভারতের তুষার অঞ্চলে মূলত ব্যান্ডি খেলা হয়। ২৭ সদস্যের বিশ্ব ব্যান্ডি ফেডারেশনে ভারত এশিয়ার ৫টি দেশের অন্যতম। ভারত ২০১১ সালের শীতকালীন এশিয়াডে ব্যান্ডি দল পাঠাবে।[৩]

বেসবল ও সফ্টবল[সম্পাদনা]

বেসবল ভারতে অধুনা শুরু হয়েছে। আর সফ্টবল ভারতে বিদ্যালয় ও বিশ্ববিদ্যালয় স্তরে খেলা হয়। তবে রিঙ্কু সিংহ ও দীনেশ পটেল নামের দুই কিশোর এক প্রতিযোগিতায় জিতে আমেরিকার মেজর লিগ বেসবলে পিটসবার্গ পাইরেটস-এর হয়ে খেলতে চলেছে।[৪][৫] এদের সাফল্যের ওপর ভারতে বেসবলের জনপ্রিয়তা অনেকাংশে নির্ভর করবে।

বাস্কেটবল[সম্পাদনা]

বাস্কেটবল ভারতের প্রায় সব বিদ্যালয়েই খেলা হয়। তবে পেশাদার পর্যায়ে কমই খেলা হয়। ভারত অলিম্পিকে ১বার ও এশীয় প্রতিযোগিতায় ২০ বার অংশ নিয়েছে।

মুষ্টিযুদ্ধ[সম্পাদনা]

মুষ্টিযুদ্ধ ভারতে খুব একটা জনপ্রিয় খেলা নয়। তবে ২০০৮ সালের গ্রীষ্মকালীন অলিম্পিকে পদক জয় কিছুটা হলেও এই খেলার প্রতি উৎসাহ বাড়িয়েছে।

সাইক্লিং[সম্পাদনা]

ভারতে সাইক্লিং ১৯৩৮ সাল থেকে প্রচলিত। ভারতে সাইকেল বাহন হিসাবে বহুল ব্যবহৃত হলেও খেলা হিসাবে সেভাবে প্রচলিত নয়।

অশ্বচালনা[সম্পাদনা]

ভারতে অশ্বচালনার বিভিন্ন বিভাগের মধ্যে ইভেন্টিং সর্বাপেক্ষা জনপ্রিয়। ভারত এশিয়াতে ২০০২ ও ২০০৬ সালে এই বিভাগে কাংস পদক জিতেছে।

দাবা[সম্পাদনা]

ভারতীয় দাবার ভবিষ্যত বেশ উজ্জল। কোনেরু হাম্পি, সূর্যশেখর গাঙ্গুলি, পরিমার্জন নেগির মত অনেক তরুণ প্রতিভা আন্তর্জাতিক ক্ষেত্রে নিয়মিত নিজেদের দক্ষতার ছাপ ফেলছেন। মা-বাবারাও এখন তাঁদের সন্তানদের দাবা পেশা হিসাবে নিতে উৎসাহ দিচ্ছেন। প্রতিষ্ঠিতদের মধ্যে দিব্যেন্দু বড়ুয়া, পি. হরিকৃষ্ণন, কৃষ্ণন শশিকিরণ ও সর্বোপরি বিশ্বজয়ী বিশ্বনাথন আনন্দ ধারাবাহিক ভাবে আন্তর্জাতিক সাফল্য পেয়ে চলেছেন। ভারতীয় খেলা চতুরঙ্গ থেকে দাবার উদ্ভব। চতুরঙ্গ নামের উদ্ভব হয় মহাভারতের সময়ের যুদ্ধের সৈন্য বিভাজন থেকে। পরবর্তিকালে পারসীদের হাতে এর নাম হয় সতরঞ্জ, যা কিনা রাজা-রাজড়াদের খেলা ছিল। ভারত স্বাধীন হবার পরই এই খেলা আমজনতার আয়ত্তে আসে। ১৯৫১ সালে নিয়ামক সংস্থা, সারা ভারত দাবা ফেডারেশনের স্থাপনা হয়।

ফিল্ড হকি[সম্পাদনা]

ফিল্ড হকি বিংশ শতাব্দীর মাঝামাঝি পর্যন্ত বিশ্বে ভারতের একচ্ছত্র আধিপত্য ছিল এই খেলায়। আটবার অলিম্পিক সোনা জিতেছে ভারতীয় পুরুষদের হকি দল। ইউরোপীয় সংবাদমাধ্যম ভারতীয় হকির প্রবাদ পুরুষ ধ্যান চাঁদকে হকির জাদুকর আখ্যা দিয়েছিল। জাতীয় খেলা হিসেবে হকি কে গণ্য করা হয় । এ নিয়ে একটি আরটিআই-এর জবাবে ক্রীড়া মন্ত্রক থেকে স্পষ্ট করা হয়, ন্যাশনাল স্পোর্টস হিসেবে হকিকে কখনই ঘোষণা করা হয়নি।[৬]

ফ্লোরবল[সম্পাদনা]

ফ্লোরবল ভারতে ক্রমশঃ জনপ্রিয় হচ্ছে। ভারতীয় ফ্লোরবল ফেডারেশন ২০০১ সালে প্রতিষ্ঠা হয়। অদ্যাবধি ৪টি জাতীয় স্তরে প্রতিযোগিতা হয়েছে। আপাততঃ ভারত আন্তর্জাতিক ফ্লোরবল ফেডারেশনের প্রভিশনাল সদস্য। সেই সুবাদে ভারত অনেক আন্তর্জাতিক সৌজন্যমূলক খেলায় অংশগ্রহণ করেছে।[৭]

ফুটবল[সম্পাদনা]

ফুটবল ভারতের অন্যতম জনপ্রিয় খেলা। ব্রিটিশরা এই খেলা ভারতে নিয়ে আসে। দেশের কিছু জায়গায় ফুটবল ক্রিকেটের সমান জনপ্রিয়। ষাটের দশক পর্যন্ত ভারত এশিয়ার অন্যতম শক্তিশালী দেশ ছিল। ৩০শে জুন ২০১৮ এর হিসাবে ভারত ফিফা ক্রমপর্যায়ে ৯৭তম স্থানে আছে।

ফরমুলা ওয়ান[সম্পাদনা]

আর্দ্রিয়ান সুটিলের সামনে জিয়ানকার্লো ফিসিচেলা, ২০০৮ কানাডা গ্রাঁ প্রিতে

ফোর্স ইন্ডিয়া এফ ওয়ান একটি ভারতীয় ফরমুলা ওয়ান দল। ২০০৭ সালের অক্টোবর মাসে স্পাইকার এফ ওয়ান দলকে €৮৮০লক্ষের বিনিময়ে কিনে, এই দল গঠন করেন ভারতীয় ব্যবসায়ী বিজয় মালিয়ামাইকেল মল[৮] ২৯বার অংশগ্রহণের পর ২০০৯ সালের বেলজিয়ান গ্রাঁ প্রিতে দ্বিতীয় হয়ে ফোর্স ইন্ডিয়ার জিয়ানকার্লো ফিসিচেলা ফরমুলা ওয়ান প্রতিযোগিতায় প্রথম পয়েন্ট জেতেন।[৯] নতুন দিল্লী থেকে ৫০কিমি দুরে গ্রেটার নয়ডার জেপি গ্রুপ সার্কিটে ভারতীয় গ্রাঁ প্রির আসর বসতে চলেছে ২০১১ সালে।

গল্ফ[সম্পাদনা]

ভারতে গল্ফ ধীরে ধীরে জনপ্রিয়তা লাভ করছে। যদিও এখনো পর্যন্ত্ এই ব্যয়বহুল খেলা শুধুমাত্র ধনীসমাজেই সীমাবদ্ধ আছে।জীব মিলখা সিংহ ভারতের সবচেয়ে সফল গল্ফ খেলোয়াড়। বিশ্বজুড়ে অনেক খেতাব জিতেছেন তিনি। এছাড়া গৌরব ঘেই, অনির্বান লাহিড়ী, জ্যোতি রনধাওয়া, শিব চৌরাসিয়া, অদিতি অশোকঅর্জুন অটওয়াল গল্ফ দুনিয়ার সুপরিচিত নাম। ভারতে অজস্র গল্ফ খেলার মাঠ আছে। ভারতীয় পুরুষদের গল্ফ দল ২০০৬ এশিয়াডে রূপা জয়ী।

আইস হকি[সম্পাদনা]

ভারতে প্রধানত জম্মু ও কাশ্মীর রাজ্যের হিমালয় অঞ্চলের লাদাখে আইস হকি খেলা হয়। শীতকালে এই খেলা ভীষণ জনপ্রীয়। ২৫টিরও বেশি ক্লাব ও গ্রামে এটি খেলা হয়। যদিও কৃত্রিমভাবে বরফ জমানোর ব্যবস্থা না থাকায় শীতের তিনমাস, ডিসেম্বর, জানুয়ারী ও ফেব্রুয়ারিতে প্রাকৃতিক ভাবে জমে যাওয়া হ্রদ বা পুকুরে আইস হকি খেলা হয়। তবে, ভারতের প্রথম কৃত্রিম আইস হকির রিঙ্ক উত্তরাখন্ড রাজ্যের দেরাদুনে ২০০৯ সালের মার্চ মাসে খোলে। এটি আন্তর্জাতিক মাপের ও সঙ্গে অনুশীলনের জন্য ছোট আর একটি রিঙ্ক আছে।

কায়াকিং[সম্পাদনা]

স্থির জল ও সমুদ্র কায়াকিং[সম্পাদনা]

এশিয়ার মধ্যে ভারত আস্তে আস্তে কায়াক চালনায় নিজের একটা জায়গা করে নিচ্ছে। তবে পেশাদাররা ছাড়া সাধারণ মানুষ এখনো পর্যন্ত একে খেলা হিসাবে গ্রহণ করেনি।

সফেনজল কায়াকিং[সম্পাদনা]

সফেনজল কায়াকিং-এর নিজস্য অ্যাডভেঞ্চারপ্রেমী অনুগামী আছেন। উত্তরে হিমালয়ে আর দক্ষিণে কর্ণাটকের কালি নদীতে এই ধরনের কায়াকিং হয়। বেশিরভাগ কায়াক চালক আগে র‌্যাফ্ট চালাতেন। অভিনব কালা, শলভ গেহলট, জন পোলার্ডের মত নামকরা কায়াক চালকেরা ভারত ও নেপালের অনেক নদীতে প্রথমবার কায়াক চালাবার দূর্লভ অভিজ্ঞতা অর্জন করেছেন। সরঞ্জামের অভাব এই খেলায় ভারতীয়দের মূল প্রতিবন্ধক। যেখানে আন্তর্জাতিক স্তরে কায়াকের নক্সা প্রতিব্ছর পরিবর্তিত হচ্ছে সেখানে ভারতীয়রা হয় পুরানো ব্যবহৃত কায়াক কিনছেন অথবা অনেক বেশি দাম দিয়ে নতুন কায়াক কিনছেন। তা সত্বেও, সংবাদমাধ্যমের পৃষ্ঠপোষকতায় প্রতি বছর আরো বেশি সংখ্যক লোকে কায়াকিং করতে আসছেন। তা ছাড়া, নদীতে বাঁধের সংখ্যা বাড়ার সাথে সাথে ভারতে কায়াকিং-এর এক একটি অভিযানের সময় একাধিক দিন থেকে কমে আসছে।

কাবাডি[সম্পাদনা]

কাবাডির সূচনা ভারতেই হয়। ভারতের গ্রামাঞ্চলের অন্যতম জনপ্রিয় খেলা এটি। ভারত ৪টি এশিয়াডে কাবাডিতে অংশ নিয়ে চারটিতেই সোনা জিতেছে। বিশ্ব কাবাডিতে ভারত এখনো পর্যন্ত সবচেয়ে শক্তিশালী। ভারতে তিন ধরনের কাবাডি খেলা হয় - অমর, সুরঞ্জিবী ও গামিনী। অমর পঞ্জাব, আমেরিকা, কানাডা ও বিশ্বের আরও কয়েকটি দেশে খেলা হয়। সুরঞ্জিবীই বিশ্বে সবচেয়ে বেশি প্রচলিত। এই আঙ্গিকেই এশিয়াডে খেলা হয়। ভারত বিশ্ব কাবাডি প্রতিযোগিতা ২০০৭ সালে ইরানকে ২৯-১৯-এ হারিয়ে জিতেছে।[১০]

কর্ফবল[সম্পাদনা]

বিশ্বে ৫০টিরও বেশি দেশে কর্ফবল খেলা হয়। ভারতে এই খেলা খুব একটা জনপ্রিয় না হলেও ভারত দুবার এশিয়া-ওশেনিয়া কর্ফবল প্রতিযোগিতায় তৃতীয় হয়েছে।

টেনিস[সম্পাদনা]

লিয়েন্ডার পেজ (বাঁদিকে), ও তাঁর সঙ্গী মহেশ ভূপতি (ডানদিকে),টেনিসে সাতটি গ্রান্ড স্লাম ডাবলস খেতাব জিতেছেন। এঁদের জন্য ভারতে টেনিসের জনপ্রিয়তা ভীষণ ভাবে বেড়ে গেছে।

ভারতের শহরাঞ্চলে টেনিস খুব জনপ্রিয়। যদিও, গ্র্যান্ড স্লাম সিঙ্গলসে ভারতের উল্লেখযোগ্য কোনো সাফল্য নেই, তবে ডাবলসে ও মিক্সড ডাবলসে লিয়েন্ডার পেজমহেশ ভূপতি অনেক খেতাব জিতেছেন। মহিলাদের মধ্যে সানিয়া মির্জা এবং অঙ্কিতা রায়না উল্লেখ্য। মহিলাদের একক ক্রমপর্যায়ে সানিয়া প্রথম ৩০-এর মধ্যেও এসেছিলেন। তরুণদের মধ্যে য়ুকি ভামব্রিসোমদেব দেববর্মণ, সুমিত নাগাল যথেষ্ট সম্ভাবনাময়।

মাউন্টেন বাইকিং[সম্পাদনা]

মাউন্টেন বাইকিং আস্তে আস্তে বাড়ছে। নিয়মিত হিমাচল MTB অনুষ্ঠিত হচ্ছে। যাতে দেশি-বিদেশি অনেক প্রতিযোগী ছাড়াও ভারতীয় সেনাবাহিনী, বায়ুসেনাও অংশ নিচ্ছে। এর জনপ্রিয়তা দেখে সিকিম সরকারও মাউন্টেন বাইকিং প্রতিযোগিতার আয়োজন করছে যার পুরষ্কারমূল্য দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার সবচেয়ে বেশি। ভারতে এখন বিশ্বমানের সাইকেলও পাওয়া যাচ্ছে, ফায়ারফক্স, মেরিডা ও BSA-এর সৌজন্যে।

রাগবী[সম্পাদনা]

অন্যান্য খেলার মত রাগবীও ইংল্যান্ডে সৃষ্ট ও ব্রিটিশ রাজের সময় ভারতে আগত। ভারতে রাগবী ইউনিয়নের দীর্ঘ ইতিহাস আছে। ভারতে কোলকাতায় প্রথম ১৮৭২ সালে রাগবী খেলা হয়। ভারতে মনে করা হয় শীতকালে ফুটবলের পরে দ্বিতীয় জনপ্রিয়তম খেলা রাগবী। এই মুহূর্তে ভারতীয় জাতীয় দল বিশ্ব ক্রমপর্যায়ে ৯৫টি দেশের মধ্যে ৮০তম স্থানে আছে।[১১]

সেপাক টাকরো[সম্পাদনা]

সেপাক টাকরো ভারতে সে ভাবে জনপ্রিয় নয়। যদিও ১৯৮২ সালের দিল্লী এশিয়াডে এটির প্রদর্শনী হয়।[১২] ভারতীয় সেপাক টাকরো ফেডারেশনের অফিস নাগপুরে স্থাপিত হয় একই বছরে।[১৩] এই খেলা ভারতের উত্তর-পূর্বাঞ্চলে ভীষণ জনপ্রিয়। ভারতের সেরা খেলোয়াড়েরা এখান থেকেই উঠে এসেছেন।

টেবিল টেনিস[সম্পাদনা]

টেবিল টেনিস ভারতের, বিশেষ করে পশ্চিমবঙ্গতামিলনাডুর ভীষণ জনপ্রিয় খেলা। জুন ২০১৮-র হিসেবে, ভারত বিশ্বক্রমপর্যায়ে একাদশ স্থানে আছে। শরথ কমল, সাথিয়া জ্ঞানশেখরণ, মনিকা বাত্রা,সুতীর্থা মুখার্জী প্রমুখরা এশীয় পর্যায়ে যথেষ্ট সাফল্য লাভ করেছেন।

থ্রোবল[সম্পাদনা]

থ্রোবল ভারতে প্রতিযোগিতামূলক খেলা হিসাবে বেশ জনপ্রিয়। ভারতীয় থ্রোবল নিয়ামক সংস্থা প্রথমে এশিয়া ও পরে বিশ্ব সংস্থার গঠনে অগ্রনী ভূমিকা নিয়েছে। এশিয়ার অনেক দেশে যেমন, ভারত, শ্রীলঙ্কা, কোরিয়া, থাইল্যান্ড, মালয়েশিয়া, জাপান, চিন, পাকিস্তান, নেপাল ও বাংলাদেশে এটি খেলা হয়। ধীরে ধীরে ফ্রান্স, অস্ট্রেলিয়া, ব্রাজিল , যুক্তরাজ্য ইত্যাদি দেশেও এই খেলা জনপ্রিয় হচ্ছে।

ভলিবল[সম্পাদনা]

ভলিবল সারাভারতের একটি জনপ্রিয় খেলা। ভারত এশীয় ও বিশ্ব ক্রমপর্যায়ে যথাক্রমে ৫ম ও ২৭তম স্থানে অবস্থানে আছে। যুব ভলিবলে ভারত যথেষ্ট ভাল অবস্থানে আছে।২০০৩ বিশ্ব যুব ভলিবলে ভারত দ্বিতীয় হয়। তবে পৃষ্ঠপোষকের অভাব ভারতীয় ভলিবলের এক বিরাট সমস্য।

তথ্যসূত্র[সম্পাদনা]

  1. Guillain, Jean-Yves (২০০৪-০৯-০২)। Badminton: An Illustrated History। Publibook। পৃষ্ঠা 47। আইএসবিএন 2748305728 
  2. Connors, M (১৯৯১)। The Olympics Factbook: A Spectator's Guide to the Winter and Summer GamesMichigan: Visible Ink Press। পৃষ্ঠা 195। আইএসবিএন 0810394170  অজানা প্যারামিটার |coauthors= উপেক্ষা করা হয়েছে (|author= ব্যবহারের পরামর্শ দেয়া হচ্ছে) (সাহায্য);
  3. "সংরক্ষণাগারভুক্ত অনুলিপি"। ১০ অক্টোবর ২০০৭ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ১ এপ্রিল ২০১০ 
  4. http://www.usatoday.com/sports/baseball/2008-11-04-india-pitchers_N.htm
  5. http://www.google.com/hostednews/afp/article/ALeqM5jNTISka0-ucftf1Suc81RUDW1M2wTheir[স্থায়ীভাবে অকার্যকর সংযোগ]
  6. http://www.anandabazar.com/photogallery/picture-gallery-of-8-biggest-lies-that-had-fooled-us-dgtl-1.349908#
  7. "সংরক্ষণাগারভুক্ত অনুলিপি"। ২৬ জুলাই ২০১১ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ৪ মে ২০২১ 
  8. "Spyker F1 team officially sold"। GPUpdate.net। ২০০৭-১০-০৫। 
  9. "Spa-Francorchamps results"। BBC Sport। ২০০৯-০৮-৩০। সংগ্রহের তারিখ ২০০৯-০৮-৩০ 
  10. "সংরক্ষণাগারভুক্ত অনুলিপি"। ১৩ জুলাই ২০১১ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ১ এপ্রিল ২০১০ 
  11. "Rugby in India thriving with international help"। ২১ ফেব্রুয়ারি ২০১১ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ১ এপ্রিল ২০১০ 
  12. "The Hindu : Metro Plus Hyderabad / Sport : Takraw tourney to kick off"। ২ নভেম্বর ২০০৭ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ১ এপ্রিল ২০১০ 
  13. "Sportal - Sports Portal - GOVERNMENT OF INDIA"। ১৬ এপ্রিল ২০০৯ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ১ এপ্রিল ২০১০ 

বহিঃসংযোগ[সম্পাদনা]