মধ্যপ্রাচ্য

স্থানাঙ্ক: ২৯° উত্তর ৪১° পূর্ব / ২৯° উত্তর ৪১° পূর্ব / 29; 41
উইকিপিডিয়া, মুক্ত বিশ্বকোষ থেকে
(মধ্য প্রাচ্য থেকে পুনর্নির্দেশিত)
মধ্যপ্রাচ্য
Middle East
বিশ্ব মানচিত্রে মধ্যপ্রাচ্য
আয়তন৭২,০৭,৫৭৫ কিমি (২৭,৮২,৮৬০ মা)
জনসংখ্যা৩৭১ মিলিয়ন (২০১০)[১]
ধর্ম
দেশসমূহ
অধীনস্থ অঞ্চলসমূহ
ভাষাসমূহ
৬০টি ভাষা
সময় অঞ্চলসমূহইউটিসি+০২:০০, ইউটিসি+০৩:০০, ইউটিসি+০৩:৩০, ইউটিসি+০৪:০০, ইউটিসি+০৪:৩০
বৃহত্তম শহরসমূহ
আফ্রিকা, ইউরোপ, মধ্য এশিয়াদক্ষিণ এশিয়ার মাঝে মধ্যপ্রাচ্যের মানচিত্র
কোপেন জলবায়ু শ্রেণিবিন্যাসে মধ্যপ্রাচ্যের মানচিত্র

মধ্যপ্রাচ্য (আরবি : الشرق الأوسط : Ash–Sharq Al–Awsat) হল একটি ভূ-রাজনৈতিক অঞ্চল, যা আরব উপদ্বীপ, এশিয়া মাইনর, (হাতাই প্রদেশ ছাড়া তুরস্কের এশীয় অংশ), পূর্ব থ্রেস (তুরস্কের ইউরোপীয় অংশ), মিশর, ইরান, লেভান্ট (আশ-শামসাইপ্রাস), ইরাকইয়েমেনের সুকাত্রা প্রদেশের সমন্বয়ে গঠিত।[৫][৬] মধ্যপ্রাচ্য শব্দটি ২০ শতকের গোড়ার দিকে শুরু হওয়া নিকট প্রাচ্য (দূর প্রাচ্যের বিপরীতে) শব্দের প্রতিস্থাপন হিসাবে ব্যাপকভাবে ব্যবহৃত হয়। "মধ্যপ্রাচ্য" শব্দটির পরিবর্তিত সংজ্ঞা নিয়ে কিছু বিভ্রান্তির জন্ম দেয় এবং কেউ কেউ একে বৈষম্যমূলক বা খুব ইউরোপকেন্দ্রিক শব্দ বলে মনে করে।[৭][৫] এই অঞ্চলে পশ্চিম এশিয়ার (ইরানসহ) বেশিরভাগ অঞ্চল অন্তর্ভুক্ত রয়েছে। তবে দক্ষিণ ককেশাস, মিশরের সিনাইতুরস্কের পূর্ব থ্রেস অঞ্চল মধ্যপ্রাচ্যের অন্তর্ভুক্ত নয়।[৬] মধ্যপ্রাচ্যের বেশিরভাগ দেশ মুসলিম সংখ্যাগরিষ্ঠ।

মধ্যপ্রাচ্যের অধিকাংশ দেশ (মোট ১৮টির মধ্যে ১৩টি) আরব বিশ্বের অংশ। এই অঞ্চলের সর্বাধিক জনবহুল দেশগুলো হল মিশর, তুরস্কইরান এবং সৌদি আরব আয়তনের দিক থেকে মধ্যপ্রাচ্যের বৃহত্তম দেশ। এই অঞ্চলের ইতিহাস প্রাচীনকাল থেকেই শুরু হয় এবং সহস্রাব্দ ধরে এর ভূ-রাজনৈতিক গুরুত্ব স্বীকৃত।[৮][৯][১০] ইহুদি, খ্রিস্টইসলামসহ বেশ কয়েকটি প্রধান ধর্মের উৎপত্তিস্থল হল মধ্যপ্রাচ্য।[১১] আরবরা এই অঞ্চলের প্রধান আর্থ–সামাজিক গোষ্ঠী;[১২] তাদের পরে রয়েছে যথাক্রমে তুর্কি,পারস্যিক, কুর্দি, আজারি, কিবতীয়, ইহুদি, অ্যাসিরীয়, ইরাকি তুর্কমেন, ইয়াজিদি ও গ্রীক সাইপ্রিয়টরা[৬]

মধ্যপ্রাচ্য অঞ্চলজুড়ে সাধারণত গরম ও শুষ্ক জলবায়ু থাকে; বিশেষত আরবমিশরীয় অঞ্চলে। মিশরের নীলনদ, ইরাকের দজলাফোরাত নদী এবং পূর্ব-ভূমধ্যসাগরীয় অঞ্চলের অধিকাংশ এলাকা জুড়ে প্রবাহিত জর্দান নদীর অববাহিকা সীমিত অঞ্চলে কৃষি –ব্যবস্থা সচল রাখতে বেশ কয়েকটি প্রধান নদী সেচ সরবরাহ করে। এই অঞ্চলগুলো সম্মিলিতভাবে উর্বর অর্ধচন্দ্র হিসাবে পরিচিত এবং ইতিহাসবিদরা দীর্ঘকাল ধরে এ অঞ্চলকে সভ্যতার শৃঙ্গ হিসাবে উল্লেখ করেন।[১৩]। এর বিপরীতে পূর্ব-ভূমধ্যসাগরীয় উপকূল এবং তুরস্কের বেশিরভাগ অংশে শুষ্ক গ্রীষ্ম ও শীতল, আর্দ্র শীতসহ ভূমধ্যসাগরের মত তুলনামূলক নাতিশীতোষ্ণ জলবায়ু রয়েছে। পারস্য উপসাগরের তীরবর্তী বেশির ভাগ দেশেই পেট্রোলিয়ামের বিশাল মজুদ রয়েছে।[১৪] বিশেষ করে আরব উপদ্বীপের রাষ্ট্রগুলো পেট্রোলিয়াম রপ্তানি থেকে অর্থনৈতিকভাবে ব্যাপক লাভবান হয়। শুষ্ক জলবায়ুজীবাশ্ম জ্বালানী শিল্পের উপর অত্যধিক নির্ভরতার কারণে গোটা মধ্যপ্রাচ্য উভয়ই জলবায়ু পরিবর্তনে ব্যাপক অবদান রাখে এবং একটি অঞ্চল এটি দ্বারা মারাত্মক নেতিবাচকভাবে প্রভাবিত হবে বলে ধারণা করা হচ্ছে।[১৪]

এই অঞ্চলটিকে বোঝাতে আরো কিছু ধারণা প্রচলিত আছে। এর মধ্যে রয়েছে বৃহত্তর মধ্যপ্রাচ্যউত্তর আফ্রিকা (মেনা), এটি মাগরেবসুদানকেও অন্তর্ভুক্ত করে (যা মধ্যপ্রাচ্যের অংশ নয়) অথবা এমন "বৃহত্তর মধ্যপ্রাচ্য", এর মধ্যে পূর্ব আফ্রিকা, মৌরিতানিয়া, আফগানিস্তানপাকিস্তানেরও কিছু অংশ অন্তর্ভুক্ত রয়েছে এবং কখনও কখনও মধ্য এশিয়া এবং দক্ষিণ ককেশাসও এর অন্তর্ভুক্ত হয়ে থাকে।[১৫][১৬][১৭]

পরিভাষা[সম্পাদনা]

"মধ্যপ্রাচ্য" শব্দটি ১৮৫০- এর দশকে ব্রিটিশ ইন্ডিয়া অফিস থেকে উদ্ভূত হতে পারে।[১৮][১৯] তবে মার্কিন নৌ কৌশলবিদ আলফ্রেড থায়ের মাহান ১৯০২ সালে "আরব ও ভারতের মধ্যবর্তী অঞ্চলকে" বোঝাতে এই শব্দটি ব্যবহার করার পর আরো ব্যাপকভাবে পরিচিত হয়ে ওঠে। [৬][২০] এই সময়ে ব্রিটিশ সাম্রাজ্যেররুশ সাম্রাজ্যের মাঝে মধ্য এশিয়ায় প্রভাব বিস্তারের লক্ষ্যে প্রতিদ্বন্দ্বিতা চলছিল। এই প্রতিদ্বন্দ্বিতা পরবর্তীতে গ্রেট গেম নামে পরিচিত হয়। আলফ্রেড মাহান কেবল এই অঞ্চলের কৌশলগত গুরুত্বই উপলব্ধি করেননি; বরং তিনি এর কেন্দ্র পারস্য উপসাগরের গুরুত্বও উপলব্ধি করেন।[২১] তিনি পারস্য উপসাগর-বর্তী অঞ্চলটিকে মধ্যপ্রাচ্য হিসাবে চিহ্নিত করেন এবং তিনি বলেন যে, মিশরের সুয়েজ খালের পরে রুশদের ব্রিটিশ ভারতের দিকে অগ্রসর হওয়া থেকে বিরত রাখার জন্য এটি ব্রিটেনের নিয়ন্ত্রণের জন্য সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ পথ।[২২] ১৯০২ সালের সেপ্টেম্বরে ব্রিটিশ সংবাদপত্র ন্যাশনাল রিভিউতে প্রকাশিত "পারস্য উপসাগর ও আন্তর্জাতিক সম্পর্ক" প্রবন্ধে তিনি প্রথম এই শব্দটি ব্যবহার করেন।[২৩] তিনি বলেন,

মধ্যপ্রাচ্য, যদি আমি এমন একটি শব্দ গ্রহণ করি, যা আমি দেখিনি, তাহলে কোনো দিন তার মাল্টা এবং সেইসাথে তার জিব্রাল্টার প্রয়োজন হবে। নৌবাহিনীর গতিশীলতার গুণ রয়েছে, যা সাময়িক অনুপস্থিতির সুবিধা বহন করে; কিন্তু অপারেশনের প্রতিটি দৃশ্যে এটিকে রিফিট, সরবরাহের ঘাঁটি খুঁজে বের করতে হবে এবং দুর্যোগের ক্ষেত্রে নিরাপত্তার ভিত্তি স্থাপন করতে হবে। ব্রিটিশ নৌবাহিনীর এডেন, ভারত এবং পারস্য উপসাগরে সুযোগ সৃষ্টি হলে শক্তিতে মনোনিবেশ করার সুবিধা থাকা উচিত"।[২৪]

মাহানের নিবন্ধটি দ্য টাইমসে পুনর্মুদ্রিত হয়েছিল এবং অক্টোবরে স্যার ইগনাটিয়াস ভ্যালেন্টাইন চিরোলের লেখা "দ্য মিডল ইস্টার্ন কোয়েশ্চেন" শিরোনামে একটি ২০-নিবন্ধসম্পন্ন সিরিজে নিবন্ধটিকে অনুসরণ করা হয়েছিল। এই সিরিজ চলাকালীন স্যার ইগনাশিয়াস মধ্যপ্রাচ্যের সংজ্ঞা সম্প্রসারিত করেন এবং এতে তিনি বলেন যে, মধ্যপ্রাচ্য এশিয়ার সেই অঞ্চলগুলো যেগুলো ভারতের সীমানা পর্যন্ত বিস্তৃত হয় বা ভারতে যাওয়ার পথ নির্দেশ করে।"[২৫] ১৯০৩ সালে সিরিজটি শেষ হওয়ার পর দ্য টাইমস শব্দটির পরবর্তী ব্যবহার থেকে উদ্ধৃতি চিহ্ন সরিয়ে দেয়।[২৫]

দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের আগ পর্যন্ত তুরস্কভূমধ্যসাগরের পূর্ব উপকূলকে কেন্দ্র করে অবস্থিত এলাকাগুলোকে "নিকট প্রাচ্য" হিসাবে উল্লেখ করার প্রথা ছিল এবং "দূরপ্রাচ্য" বলতে তখন চীন ও এর পার্শ্ববর্তী এলাকা বোঝানো হতো।[২৬] কিন্তু মধ্যপ্রাচ্য বলতে তখন কেবল মেসোপটেমিয়া থেকে বার্মা পর্যন্ত অঞ্চলকে বোঝানো হত অর্থাৎ নিকট প্রাচ্য ও দূর প্রাচ্যের মধ্যবর্তী অঞ্চল। ১৯৩০ এর দশকের শেষের দিকে ব্রিটিশরা এ অঞ্চলে তাদের সামরিক বাহিনীর জন্য কায়রোভিত্তিক একটি মধ্যপ্রাচ্য কমান্ড প্রতিষ্ঠা করে। তখন থেকে "মধ্যপ্রাচ্য" শব্দটি ইউরোপমার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে বিস্তৃত ব্যবহার লাভ করে। এরই ধারাবাহিকতায় শব্দটির অন্যান্য ব্যবহারের মতোই ১৯৪৬ সালে ওয়াশিংটন ডিসিতে মিডল ইস্ট ইনস্টিটিউট প্রতিষ্ঠিত হয়।[২৭]

যদিও "দক্ষিণ-পশ্চিম এশিয়া" বা "সোয়াসিয়া"-র মতো অ-ইউরোপকেন্দ্রিক শব্দগুলো খুব কমই ব্যবহৃত হয়; তবে এর সংজ্ঞায় আফ্রিকীয় দেশ মিশরের অন্তর্ভুক্তি এই জাতীয় পদগুলো ব্যবহারের কার্যকারিতা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছে।[২৮]

ব্যবহার ও সমালোচনা[সম্পাদনা]

মধ্যপ্রাচ্য নিয়ে ১৯৫৭ সালের একটি মার্কিন চলচ্চিত্র

'মধ্য' শব্দটির সংজ্ঞা নিয়ে কিছু বিভ্রান্তি রয়েছে। প্রথম বিশ্বযুদ্ধের আগে বলকান এবং উসমানীয় সাম্রাজ্যকে বোঝাতে ইংরেজিতে "নিকট প্রাচ্য" ব্যবহার করা হতো এবং তখন "মধ্যপ্রাচ্য" বলতে ককেশাস, পারস্যআরব ভূমি[২৯] এবং কখনো কখনো আফগানিস্তান, ভারত ও অন্যান্য অঞ্চলকে উল্লেখ করা হতো।[৩০] এর বিপরীতে "দূরপ্রাচ্য" পূর্ব এশিয়ার দেশগুলোকে নির্দেশ করে ব্যবহৃত হতো। (যেমন: চীন, জাপানকোরিয়া)।[৩১][৩২]

১৯১৮ সালে উসমানি সাম্রাজ্যের পতনের সাথে সাথে "নিকট প্রাচ্য" শব্দটি ইংরেজিতে সাধারণ ব্যবহারের বাইরে চলে যায় এবং তখন 'মধ্যপ্রাচ্য' শব্দটি মুসলিম বিশ্বের পুনরায় উদীয়মান দেশগুলোর ক্ষেত্রে প্রয়োগ করা হয়। যাহোক, "নিকট প্রাচ্য" ব্যবহারটি প্রত্নতত্ত্বপ্রাচীন ইতিহাসসহ বিভিন্ন প্রাতিষ্ঠানিক শাখা কর্তৃক ধরে রাখা হয় এবং এটি "মধ্যপ্রাচ্য" শব্দটির অনুরূপ একটি অঞ্চল বর্ণনা করে। (প্রাচীন নিকট প্রাচ্য দেখুন)

মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র সরকার কর্তৃক "মধ্যপ্রাচ্য" শব্দটির প্রথম আনুষ্ঠানিক ব্যবহার হয় ১৯৫৭ সালের আইজেন হাওয়ার মতবাদে, যা সুয়েজ সংকটের সাথে সম্পর্কিত ছিল। মার্কিন সেক্রেটারি অফ স্টেট জনফস্টার ডুলেস মধ্যপ্রাচ্যকে "পশ্চিমে লিবিয়া, পূর্বে পাকিস্তান, উত্তরে সিরিয়াইরাক এবং দক্ষিণে আরব উপদ্বীপ এবং সুদানইথিওপিয়াসহ সংজ্ঞায়িত করেছেন।"[২৬] ১৯৫৮ সালে স্টেট ডিপার্টমেন্ট ব্যাখ্যা করে যে, "নিকট প্রাচ্য" ও "মধ্যপ্রাচ্য" শব্দগুলো বিনিময়যোগ্য এবং এই অঞ্চলটিতে কেবল মিশর, সিরিয়া, ফিলিস্তিন, লেবানন, জর্ডান, ইরাক, সৌদি আরব, কুয়েত, বাহরাইন এবং কাতার অন্তর্ভুক্ত আছে।[৩৩]

"মধ্যপ্রাচ্য" শব্দটিকে সাংবাদিক লুয়ে খরাইশ এবং ইতিহাসবিদ হাসান হানাফী ইউরোপকেন্দ্রিক সেইসাথে উপনিবেশবাদী শব্দ বলেও সমালোচনা করেছেন।[৩৪] [৩৫][৩৬] অ্যাসোসিয়েটেড প্রেস স্টাইলবুক মতে, পূর্বে নিকট প্রাচ্য শব্দটি দূরতর পশ্চিম দেশগুলোকে নির্দেশ করত এবং মধ্যপ্রাচ্য পূর্বের দেশগুলোকে উল্লেখ করত; তবে এখন তারা সমার্থক। এটি নির্দেশ করে যে,

মধ্যপ্রাচ্য ব্যবহার করুন, যদি না নিকট প্রাচ্য একটি গল্পে একটি উৎস দ্বারা ব্যবহার করা হয়। (ইংরেজির ক্ষেত্রে) Mideast (মিড ইস্ট) গ্রহণযোগ্য, তবে Middle East (মিডল ইস্ট) পছন্দের।[৩৭]

অনুবাদ[সম্পাদনা]

অন্যান্য ইউরোপীয় ভাষায় নিকট প্রাচ্যমধ্যপ্রাচ্যের মতো শব্দের ব্যবহার রয়েছে। কিন্তু যেহেতু এটি একটি আপেক্ষিক বর্ণনা, তাই এদের অর্থগুলো দেশের উপর নির্ভর করে এবং সাধারণত ইংরেজি পদ থেকে ভিন্ন হয়। জার্মান ভাষায় Naher Osten[৩৮] (অর্থ: প্রাচ্যের নিকটবর্তী) শব্দটি এখনো প্রচলিত রয়েছে (আজকাল মিটলার ওস্টেন শব্দটি ইংরেজি উৎস থেকে অনূদিত প্রেস টেক্সটগুলোতে আরো বেশি সাধারণ হয়ে গিয়েছে, যদিও এর একটি স্বতন্ত্র অর্থ রয়েছে) এবং রুশ ভাষায় Ближний Восток বা Blizhniy Vostok; বুলগেরীয় ভাষায় Близкия Изток, পোলীয় ভাষায় Bliski Wschód; ক্রোয়েশীয় ভাষায় Bliski istok (যার অর্থ নিয়ার ইস্ট ) এই অঞ্চলের জন্য একমাত্র উপযুক্ত শব্দ হিসেবে রয়ে গেছে। তবে কয়েকটি ভাষায় "মধ্যপ্রাচ্য" শব্দের সমতুল্য শব্দ রয়েছে। যেমন: ফরাসি ভাষায় ময়েন-ওরিয়েন্ট, সুইডীয় ভাষায় মেলানোস্টার্ন, স্পেনীয় ভাষায় ওরিয়েন্ট মেডিও বা মেডিও ওরিয়েন্ট, এবং ইতালীয় ভাষায় মেডিও ওরিয়েন্ট[নোট ১]

সম্ভবত পশ্চিমা সংবাদপত্রের প্রভাবের কারণে মধ্য প্রাচ্যের আরবি প্রতিশব্দ 'الشرق الأوسط' (Ash-Sharq al-Awsaṭ) মূলধারার আরবি প্রেসে প্রমিত ব্যবহার হয়ে উঠেছে। যার অর্থ উত্তর আমেরিকা এবং পশ্চিম ইউরোপে ব্যবহৃত হওয়া "মধ্যপ্রাচ্য" শব্দের মতোই।। মাশরিক উপনামটি (প্রাচ্যের মূল আরবি থেকে উদ্ভূত) আরবি ভাষী বিশ্বের পূর্ব অংশ (মাগরেব হচ্ছে পশ্চিম অংশ)[৩৯] লেভান্তের চারপাশের ভিন্নভাবে সংজ্ঞায়িত একটি অঞ্চলকে নির্দেশ করে। যদিও শব্দটি পাশ্চাত্যে উদ্ভূত হয়েছিল, আরবি ছাড়াও মধ্যপ্রাচ্যের অন্যান্য ভাষাও এর অনুবাদ ব্যবহার করে। মধ্যপ্রাচ্যের জন্য ফার্সি প্রতিশব্দ হল خاورمیانه (খাভার-ই মিয়ানেহ ), হিব্রু המזרח התיכון (হামিজরাচ হাতিখন), তুর্কি Orta Doğu এবং গ্রীক ভাষায় হল Μέση Ανατολή (মেসি আনাতোলি )।

দেশ ও অঞ্চল[সম্পাদনা]

ঐতিহ্যগতভাবে মধ্যপ্রাচ্যের অন্তর্ভুক্ত আরব, এশিয়া মাইনর, পূর্ব থ্রেস, মিশর, ইরান, লেভান্ত, ইরাক এবং সুকাত্রা দ্বীপপুঞ্জকে বিশেষভাবে বিবেচনা করা হয়। এ অঞ্চলে ১৭টি জাতিসংঘ-স্বীকৃত দেশ ও একটি ব্রিটিশ বিদেশী অঞ্চল অন্তর্ভুক্ত রয়েছে।

জাতীয় প্রতীক পতাকা দেশ আয়তন

(বর্গ.কি.)
জনসংখ্যা

(২০২১)
ঘনত্ব

(প্রতি বর্গ.কি. )
রাজধানী নামমাত্র জিডিপি, বি. (২০২২)[৪০] মাথাপিছু জিডিপি (বি.) (২০২২)[৪১] মুদ্রা সরকারব্যবস্থা দাপ্তরিক ভাষা
 United Kingdom আক্রোটিরি এবং ডেকিলিয়া আক্রোটিরি এবং ডেকিলিয়া ২৫৪ ১৮,১৯৫ ৭২ এপিস্কোপি সেনানিবাস প্রযোজ্য নয় প্রযোজ্য নয় ইউরো সাংবিধানিক রাজতন্ত্রের অধীনে

নির্ভরশীল অঞ্চল

ইংরেজি
 Bahrain বাহরাইন বাহরাইন ৭৮০ ১,৫০১,৬৩৫1 ১,৯২৫ মানামা $৪৪,১৬৯ $২৯.১০৩ বাহরাইনি দিনার পরম রাজতন্ত্র আরবি
 Cyprus সাইপ্রাস সাইপ্রাস ৯,২৫০9 ৮৮৮,০০৫ ৯৬ নিকোসিয়া $২৭.৭২৬ $৩০,৬৬৩ ইউরো রাষ্ট্রপতি শাসিত প্রজাতন্ত্র গ্রিক,

তুর্কি
 Egypt মিশর মিশর ১,০১০,৪০৭ ১০২,৬৭৮,১৩৬ ১০২ কায়রো $৪৩৫.৬২১ $৪,১৬২ মিশরীয় পাউন্ড রাষ্ট্রপতি শাসিত প্রজাতন্ত্র আরবি
ইরান ইরান ১,৬৪৮,১৯৫ ৮৫,০২২,৫৪৮ ৫২ তেহরান $১,৭৩৯,০১২ $২০,২৬১ ইরানি রিয়াল ইসলামি প্রজাতন্ত্র ফার্সি
 Iraq ইরাক ইরাক ৪৩,৩১৭ ৪১,১৯০,৭০০ ৮২.৭ বাগদাদ $২৯৭,৩৪১ $৭,০৩৮ ইরাকি দিনার সংসদীয় গণতন্ত্র আরবি,

কুর্দি
 Israel ইসরায়েল ইসরায়েল ২০,৭০০ ৯,৪৪৩,৪২০9 ৪৫৫ জেরুসালেমa $৫২০.৭০৩ $৫৪,৬৮৮ ইসরায়েলি শেকেল সংসদীয় গণতন্ত্র হিব্রু
 Jordan জর্ডান জর্ডান ৯২,৩০০ ১১,০৯৮,২৭৬ ১২০ আম্মান $৪৭.৭৪৫ $৪,৬৩৬ জর্ডানীয় দিনার সাংবিধানিক রাজতন্ত্র আরবি
 Kuwait কুয়েত কুয়েত ১৭,৮২০ ৪,৬৭০,৭১৩ ২৬২ কুয়েত শহর $১৮৬,৬১০ $৩৮,৭৫৫ কুয়েতি দিনার সাংবিধানিক রাজতন্ত্র আরবি
 Lebanon লেবানন লেবানন ১০,৪৫২ ৬,৭৬৯,০০০ ৬৪৮ বৈরুত $১৯.১২৬ $২,৮০২.১৪ লেবাননী পাউন্ড সংসদীয় গণতন্ত্র আরবি
ওমান ওমান ৩০৯,৫০০ ৪,৫২০,৪৭১ ২১ মাস্কাট $১১০,১২৭ $২৩,৪১৬ ওমানি রিয়াল পরম রাজতন্ত্র আরবি
 Palestine ফিলিস্তিন ফিলিস্তিন ৬,২২০ ৫,২২৭,১৯৩ ৮৪০ রামাল্লাহa $১৮.৬৯৮ $৩,৬৮২ ইসরায়েলি শেকেল,

জর্ডানীয় দিনার
অর্ধ-রাষ্ট্রপতি শাসিত প্রজাতন্ত্র আরবি
কাতার কাতার ১১,৪৩৭ ২,৭৯৯,২০২ ২৭৫ দোহা $২২৫.৭১৬ $৮৪.৫১৪ কাতারী রিয়াল পরম রাজতন্ত্র আরবি
সৌদি আরব সৌদি আরব ২,১৪৯,৬৯০ ৩৫,০১৩,৪১৪ ১৬ রিয়াদ $১,০৪০.১৬৬ $২৮.৭৫৯ সৌদি রিয়াল পরম রাজতন্ত্র আরবি
 Syria সিরিয়া সিরিয়া ১৮৫,১৮০ ১৮,২৭৬৬,০০০ ৯৯ দামেস্ক $৬০.০৪৩ $৩,২৮৫.৩৫ সিরীয় পাউন্ড রাষ্ট্রপতি শাসিত প্রজাতন্ত্র আরবি
তুরস্ক তুরস্ক ৭৮৩,৫৬২ ৮৩,৬১৪,৩৬২ ১০৭ আঙ্কারা $৬৯২.৩৮০ $৮০.৮১ তুর্কি লিরা রাষ্ট্রপতি শাসিত প্রজাতন্ত্র তুর্কি
 United Arab Emirates সংযুক্ত আরব আমিরাত সংযুক্ত আরব আমিরাত ৮২,৮৮০ ৯,৫০৩,৭৩৮ ১১৫ আবুধাবি $৫০১.৩৫৪ $৫০.৩৪৯ আমিরাতি দিরহাম মৈত্রিতান্ত্রিক সাংবিধানিক রাজতন্ত্র আরবি
 Yemen ইয়েমেন ইয়েমেন ৫২৭,৯৭০ ৩০,৪৯১,০০০ ৫৮ সানাb

অ্যাডেন (অস্থায়ী)
$২৮.১৩৪ $৮৯১ ইয়েমেনি রিয়াল রাষ্ট্রপতি শাসিত প্রজাতন্ত্র আরবি
^ ^ জেরুজালেম হল ইসরায়েলের স্বঘোষিত রাজধানী এবং এটি বিতর্কিত। ইসরায়েলি সুপ্রিম কোর্ট ও ইসরায়েলের অন্যান্য সরকারি প্রতিষ্ঠানের প্রকৃত অবস্থান এখানে। রামাল্লা হল ফিলিস্তিনি সরকারের প্রকৃত অবস্থান এবং ফিলিস্তিনের ঘোষিত রাজধানী হল পূর্ব জেরুজালেম
খ.^ ^ চলমান গৃহযুদ্ধের কারণে হুথিদের নিয়ন্ত্রণে। সরকারের আসন এডেনে স্থানান্তরিত হয়েছে।

মধ্যপ্রাচ্যের অন্যান্য সংজ্ঞা[সম্পাদনা]

কয়েকটি ধারণা প্রায়ই মধ্যপ্রাচ্যের সাথে সমান্তরাল হয়ে আসছে। বিশেষ করে নিকট প্রাচ্য, উর্বর চন্দ্রকলালেভান্ত। নিকট প্রাচ্য, উর্বর চন্দ্রকলা এবং লেভান্ত হল ভৌগলিক ধারণা, যা আধুনিক মধ্যপ্রাচ্যের বৃহৎ অংশকে নির্দেশ করে এবং ভৌগোলিক অর্থে নিকট প্রাচ্য মধ্যপ্রাচ্যের সবচেয়ে নিকটবর্তী। এছাড়া আরবি ভাষী হওয়ার কারণে প্রাথমিকভাবে উত্তর আফ্রিকার মাগরেব অঞ্চলকেও কখনো কখনো এর অন্তর্ভুক্ত করা হয়।

দক্ষিণ ককেশাসের দেশগুলোকেও (যেমন: আর্মেনিয়া, আজারবাইজানজর্জিয়া) মাঝে মাঝে মধ্যপ্রাচ্যের সংজ্ঞায় অন্তর্ভুক্ত করা হয়।[৪২]

বৃহত্তর মধ্যপ্রাচ্য ছিল একটি রাজনৈতিক শব্দ, যা ২১ শতাব্দীর প্রথম দশকে মুসলিম বিশ্বের সাথে সম্পর্কিত বিভিন্ন দেশকে বোঝানোর জন্য ব্যবহৃত হয়। বিশেষত আফগানিস্তান, ইরান, পাকিস্তানতুরস্ককে বোঝাতে দ্বিতীয় বুশ প্রশাসন দ্বারা এটি তৈরি করা হয়েছিল[৪৩][৪৪] মধ্য এশিয়ার বিভিন্ন দেশও মাঝে মাঝে এর অন্তর্ভুক্ত হয়।[৪৫]

ইতিহাস[সম্পাদনা]

গোবেকলি তেপেতে কিছু হেঞ্জ ৯৬০০ খ্রিস্টপূর্বাব্দে স্থাপন করা হয়েছিল, যা ইংল্যান্ডের স্টোনহেঞ্জের পূর্বে সাত সহস্রাব্দেরও বেশি সময় আগে ছিল। এটি প্রাচীনতম পরিচিত কৃত্রিম ধর্মীয় কাঠামোর স্থান। [৪৬]
জেরুজালেমের ওয়েস্টার্ন ওয়াল ও কুব্বাত আস-সাখরা
জেরুজালেমের পবিত্র সেপুলচারের চার্চ
সৌদি আরবের মক্কায় অবস্থিত পবিত্র কাবা শরীফ

মধ্যপ্রাচ্য আফ্রিকা, ইউরেশিয়া এবং ভারত মহাসাগরভূমধ্যসাগরের সংযোগস্থলে অবস্থিত। এটি খ্রিস্টধর্ম, ইসলাম ধর্ম, ইহুদি ধর্ম, মানি ধর্ম, ইয়েজিদি, দ্রুজইয়ারসানির মতো ধর্ম ছাড়াও ইরানে উদ্ভূত মেন্ডীয়বাদ, জরাথুস্ট্রবাদ, মিথ্রীয়ধর্মবাহাই ধর্মের জন্মস্থান ও আধ্যাত্মিক কেন্দ্র। ইতিহাস জুড়ে মধ্যপ্রাচ্য সর্বদা বিশ্ব-বিষয়াবলীর একটি প্রধান কেন্দ্র ছিল। মধ্যপ্রাচ্য সর্বদা কৌশলগত, অর্থনৈতিক, রাজনৈতিক, সাংস্কৃতিক এবং ধর্মীয়ভাবে সংবেদনশীল অঞ্চল। এই অঞ্চলটি এমন সব অঞ্চলের একটি, যে সব অঞ্চলে কৃষি স্বাধীনভাবে আবিষ্কৃত হয়েছিল এবং মধ্যপ্রাচ্য থেকেই কৃষিব্যবস্থা নব্যপ্রস্তরযুগে ইউরোপ, সিন্ধুপূর্ব আফ্রিকার মতো বিশ্বের বিভিন্ন অঞ্চলে ছড়িয়ে পড়েছিল।

সভ্যতা গঠনের আগে প্রস্তর যুগে মধ্যপ্রাচ্যজুড়ে উন্নত সংস্কৃতি গড়ে ওঠে। কৃষিজীবীদের দ্বারা কৃষি জমির অনুসন্ধান ও পশুপালকদের দ্বারা যাজকীয় জমির অনুসন্ধানের ফলে এই অঞ্চলের মধ্যে বিভিন্ন স্থানান্তর ঘটেছিল এবং এর মাধ্যমেই এই অঞ্চলে জাতিগত ও জনসংখ্যার রূপরেখা তৈরি হয়েছিল।

মধ্যপ্রাচ্য ব্যাপকভাবে সবচেয়ে বিখ্যাত সভ্যতাগুলোর সূতিকাগার হিসেবে পরিচিত। ইতিহাসের প্রাচীনতম সভ্যতা মেসোপটেমিয়া সভ্যতা (সুমেরীয়, আক্কাদীয়, অ্যাসিরীয়াব্যাবিলনিয়া), মিশরীয়লেভান্তের কিশসহ সকল সভ্যতা নিকট প্রাচ্যের উর্বর চন্দ্রকলানীল উপত্যকা অঞ্চলে উদ্ভূত হয়েছিল। এই সকল সভ্যতা এশিয়া মাইনরের হিট্টাইট, গ্রীক, হুরিয়ান এবং ইউরাটিয়ান সভ্যতা; ইরানের এলাম ও তার মধ্যবর্তী সভ্যতা, সেইসাথে লেভান্তের সভ্যতা (যেমন এবলা, মারি, নগর, উগারিত, কেনান, আরামিয়া, মিতান্নি, ফেনিসিয়া) এবং আরব উপদ্বীপের (মাগান, শেবা, ইরাম) মতো সভ্যতাগুলোকে অনুসরণ করেছিল। নতুন অ্যাসিরীয় সাম্রাজ্যের অধীনে নিকট প্রাচ্য প্রথমে ব্যাপকভাবে একীভূত হয়েছিল ; তারপরে হাখমানেশি সাম্রাজ্য পরবর্তীতে মেসিডোনীয় সাম্রাজ্য দ্বারা এবং এর পরে কিছু পরিমাণে ইরানী সাম্রাজ্য (যেমন : পার্থিয়ানসাসানি সাম্রাজ্য ), রোমান সাম্রাজ্য এবং বাইজেন্টাইন সাম্রাজ্য দ্বারা একীভূত হয়েছিল। এই অঞ্চলটি রোমান সাম্রাজ্যের বৌদ্ধিক ও অর্থনৈতিক কেন্দ্র হিসাবে কাজ করেছিল এবং সাসানি সাম্রাজ্যের পরিধির কারণে একটি ব্যতিক্রমী গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছিল। এভাবে রোমান শাসকরা সাসানি ও বেদুইনদের অভিযান ও আক্রমণ থেকে রক্ষা করার একমাত্র উদ্দেশ্যে এই অঞ্চলে তাদের পাঁচ বা ছয়টি সৈন্যদল স্থাপন করেছিল।

খ্রিস্টীয় চতুর্থ শতাব্দী থেকে মধ্যপ্রাচ্য তখনকার দুটি পরাশক্তি বাইজেন্টাইন সাম্রাজ্যসাসানি সাম্রাজ্যের কেন্দ্রে পরিণত হয়। এই অঞ্চলটি মধ্যযুগের পরবর্তী ইসলামি খিলাফতের অধীনে ছিল এবং এই অঞ্চলেই ইসলামি স্বর্ণযুগের বিকাশ ঘটে, যা খ্রিস্টীয় ৭ম শতাব্দী থেকে এই অঞ্চলে ইসলামি বিজয়ের সাথে সাথে শুরু হয়েছিল। এটি প্রথমে সমগ্র মধ্যপ্রাচ্যকে একটি স্বতন্ত্র অঞ্চল হিসাবে একত্র করে এবং প্রভাবশালী ইসলামি আরব জাতিগত পরিচয় তৈরি করে, যার বেশিরভাগ (তবে একচেটিয়াভাবে নয়) আজও টিকে আছে।

মধ্যপ্রাচ্যে ছয়শ বছরেরও বেশি সময় ধরে আধিপত্য বিস্তারকারী চারটি খিলাফত ছিল রাশিদুন খিলাফত, উমাইয়া খিলাফত, আব্বাসীয় খিলাফতফাতেমীয় খিলাফত। এছাড়াও এই অঞ্চলে মঙ্গোলরা আধিপত্য বিস্তার করতে আসে এবং আর্মেনিয়া রাজ্যও একদা এই অঞ্চলের কিছু অংশকে তাদের প্রদেশের অন্তর্ভুক্ত করে। সেলজুকরা এই অঞ্চলে শাসন করে এবং তুর্কো -ফার্সি সংস্কৃতির বিস্তার করে। ফ্রাঙ্করা ক্রুসেড যুদ্ধের ফলে কিছু রাজ্যের দখল পায়, যা প্রায় দু শতাব্দী ধরে টিকে থাকে। জোসিয়া রাসেল ১০০০ সালে "ইসলামি অঞ্চল" হিসাবে অভিহিত করা অঞ্চলের জনসংখ্যা প্রায় ১২.৫ মিলিয়ন হিসেবে অনুমান করেছেন। এর মধ্যে আনাতোলিয়ায় ৮ মিলিয়ন, সিরিয়ায় ২ মিলিয়ন এবং মিশরে ১.৫ মিলিয়ন জনসংখ্যা ছিল বলে ধারণা করা হয়েছিল। [৪৭] ষোড়শ শতাব্দীর পর থেকে মধ্যপ্রাচ্যে আবারো দুই প্রধান শক্তি আধিপত্য বিস্তার করতে শুরু করে। এর মধ্যে পশ্চিমে বর্তমান তুরস্ক কেন্দ্রীক উসমানীয় সাম্রাজ্য এবং পূর্বে পারস্য বা বর্তমান ইরান-কেন্দ্রীক সফবীয় রাজবংশ। সেই সাথে ইউরোপীয় উপনিবেশবাদী শক্তিগুলোও মধ্যপ্রাচ্যের দিকে এগিয়ে আসতে থাকে।

আধুনিক মধ্যপ্রাচ্যের বর্তমান কাঠামো গঠন শুরু হয় প্রথম বিশ্বযুদ্ধের পরে। বিশ্বযুদ্ধে উসমানীয় সাম্রাজ্য কেন্দ্রীয় শক্তির সাথে মিত্রতা করে এবং যুদ্ধে ব্রিটিশ সাম্রাজ্য ও তাদের মিত্রদের কাছে পরাজিত হয়। তবে প্রাথমিকভাবে উসমানীয় সাম্রাজ্য ব্রিটিশ ও ফরাসি আদেশের অধীনে কয়েকটি পৃথক দেশে বিভক্ত হয়ে যায়। এই ধরনের অন্যান্য ঘটনাগুলোর মধ্যে রয়েছে ১৯৪৮ সালে ইসরায়েলের প্রতিষ্ঠা এবং ১৯৬০ এর দশকের শেষের দিকে মধ্যপ্রাচ্য থেকে ইউরোপীয় শক্তি বিশেষ করে ব্রিটেন এবং ফ্রান্সের চূড়ান্ত প্রস্থান। ১৯৭০ এর দশক থেকে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ক্রমবর্ধমান প্রভাবের কারণে কিছু অংশে তাদের প্রভাব প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল।

২০ শতকে এই অঞ্চলের খনিজ তেলের উল্লেখযোগ্য মজুদ এটিকে নতুন কৌশলগত ও অর্থনৈতিক গুরুত্ব প্রদান করেছে। ১৯৪৫ সালের দিকে এখানে তেলের ব্যাপক উৎপাদন শুরু হয়। সৌদি আরব, ইরান, ইরাক, কুয়েতসংযুক্ত আরব আমিরাতের প্রচুর পরিমাণে তেল-সম্পদ রয়েছে।[৪৮] এ অঞ্চলে ধারণাকৃত তেলের মজুদ, বিশেষত সৌদি আরবইরানের মজুদ সারা বিশ্বে শীর্ষস্থান দখল করে আছে। ফলে আন্তর্জাতিক তেল কার্টেল ওপেকে মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলো সর্বদা আধিপত্যশীল।

স্নায়ুযুদ্ধ চলাকালীন মধ্যপ্রাচ্য ছিল দুটি পরাশক্তি এবং তাদের মিত্রদের মধ্যে আদর্শিক লড়াইয়ের একটি নাট্যমঞ্চ ; একদিকে ন্যাটোমার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এবং অন্যদিকে সোভিয়েত ইউনিয়ন ও তার ওয়ারশ চুক্তি। কারণ তারা উভয় আঞ্চলিক মিত্রদের প্রভাবিত করার প্রতিযোগিতায় লিপ্ত ছিল। রাজনৈতিক অমিল ছাড়াও দুটি ব্যবস্থার মধ্যে "আদর্শগত দ্বন্দ্ব" ছিল।[৪৯] তদুপরি লুইস ফসেট যেমন যুক্তি দিয়েছেন যে, উভয়ের মাঝে বিতর্কের অনেক গুরুত্বপূর্ণ ক্ষেত্রের মধ্যে এও ছিল যে, এই গুরুত্বপূর্ণ অঞ্চলে কৌশলগত সুবিধা অর্জনের জন্য পরাশক্তিদের আকাঙ্ক্ষা এবং এই অঞ্চলে থাকা তেলের সুবিশাল ভান্ডার। এটি এমন একটি প্রেক্ষাপটে চলছিল, যখনে তেল পশ্চিমা বিশ্বের অর্থনীতির জন্য ক্রমবর্ধমান গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠছিল। এসব প্রাসঙ্গিক কারণে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র আরব বিশ্বকে সোভিয়েতের প্রভাব থেকে সরানোর চেষ্টা করছিল। ২০ ও ২১ শতক জুড়ে অঞ্চলটি আপেক্ষিক শান্তি এবং সহনশীলতার সময়কালেও সুন্নি ও শিয়াদের মধ্যে সংঘর্ষ অনুভব করেছে।[৪৯]

জনসংখ্যা[সম্পাদনা]

মনসেলের মানচিত্র; প্রথম বিশ্বযুদ্ধের পূর্বে মধ্যপ্রাচ্যের একটি ব্রিটিশ নৃতাত্ত্বিক মানচিত্র।

জাতিগোষ্ঠী[সম্পাদনা]

আরবরা মধ্যপ্রাচ্যের বৃহত্তম জাতিগোষ্ঠী; তাদের পরে রয়েছে পারস্যিক (ইরানি), তুর্কি, আজেরি, সিরীয় ও ইরাকি তুর্কমেনরাআরবরা ছাড়াও এ অঞ্চলের আদি নৃতাত্ত্বিক গোষ্ঠীর মধ্যে রয়েছে আরামীয়, অ্যাসিরিয়, বেলুচ, বারবার, কিবতীয়, দ্রুজ, গ্রীক সাইপ্রিয়ট, ইহুদি, কুর্দি, লুর, মান্দায়িয়, শমরীয়, শাবাক, তাত ও জাজা। ইউরোপীয় জাতিগোষ্ঠী যারা এই অঞ্চলে স্থায়ী হয়েছে তাদের মধ্যে রয়েছে : আলবেনীয়, বসনীয়, সার্কাসিয় (কাবার্ডিয়সহ), ক্রিমীয় তাতার, গ্রীক, ফ্রাঙ্কো-লেভান্তীয়, ইতালো-লেভান্তীয় ও ইরাকি তুর্কমেনরা। এছাড়া অন্য অভিবাসী জনগোষ্ঠীর মধ্যে রয়েছে: চীনা, ফিলিপিনো, ভারতীয়, ইন্দোনেশীয়, পাকিস্তানি, পশতুন, রোমানীয় ও আফ্রো-আরব।

অভিবাসন[সম্পাদনা]

মধ্যপ্রাচ্যে শ্রমবাজারের সংকীর্ণতার জন্য অভিবাসন পূর্বে একটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছে। ১৯৭০৯০ এর দশকে পারস্য উপসাগরের তীরবর্তী আরব রাষ্ট্রগুলো বিশেষ করে মিশর, ইয়েমেন এবং লেভান্তের দেশগুলোর শ্রমিকদের জন্য ইউরোপ কর্মসংস্থানের একটি সমৃদ্ধ উৎস হয়ে উঠেছিল। ফ্রান্সসহ ইউরোপের দেশগুলো তখন ঔপনিবেশিক সম্পর্কের কারণে উত্তর আফ্রিকার দেশগুলো থেকে তরুণ শ্রমিকদের আকৃষ্ট করেছিল।[৫০] ইন্টারন্যাশনাল অর্গানাইজেশন ফর মাইগ্রেশনের মতে, আরব দেশগুলো থেকে ১৩ মিলিয়ন প্রথম প্রজন্মের অভিবাসী বিশ্বের বিভিন্ন দেশে রয়েছে। আরব দেশগুলোর প্রবাসীরা এই অঞ্চলে আর্থিক ও মানব পুঁজির সঞ্চালনে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখে।

২০০৯ সালে আরব দেশগুলো মোট ৩৫.১ বিলিয়ন মার্কিন ডলার রেমিট্যান্স পেয়েছিল এবং অন্য আরব দেশগুলো থেকে জর্ডান, মিশরলেবাননে পাঠানো রেমিট্যান্স তাদের ও অন্যান্য আরব দেশগুলোর মধ্যে বাণিজ্য আয়ের তুলনায় ৪০ থেকে ১৯০ শতাংশ বেশি।[৫১] সোমালিয়ায় গৃহযুদ্ধের ফলে সোমালি প্রবাসীদের আকার ব্যাপকভাবে বৃদ্ধি পেয়েছে। অনেক শিক্ষিত সোমালি মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলোর পাশাপাশি ইউরোপউত্তর আমেরিকায় চলে গিয়েছে। তুরস্ক, ইসরায়েলইরানের মতো মধ্যপ্রাচ্যের অনারব দেশগুলোতেও অভিবাসন গতিশীলতার ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ বিষয়।

আরব দেশগুলো থেকে অভিবাসনকারীদের একটি বিশেষ সংখ্যা জাতিগত ও ধর্মীয় সংখ্যালঘুদের থেকে উৎপাদিত হয়েছে, যারা জাতিগত বা ধর্মীয় নিপীড়নের মুখোমুখি হয়ে অভিবাসী হয়েছে এবং তারা অবশ্যই জাতিগত আরব, ইরানী বা তুর্কি নয়। এই কারণেই গত শতাব্দীতে বিপুল সংখ্যক কুর্দি, ইহুদি, অ্যাসিরিয়, গ্রীক, আর্মেনীয়ম্যান্ডিয়ানরা ইরাক, ইরান, সিরিয়া এবং তুরস্কের মতো দেশ ছেড়ে চলে গেছে। ১৯৭৯ সালের ইসলামী বিপ্লবের পরে ইরান থেকে খ্রিস্টান, বাহাই, ইহুদিজরথুস্ত্রীয়দের মতো অনেক ধর্মীয় সংখ্যালঘু জাতি চলে গিয়েছে।[৫২][৫৩]

ধর্ম[সম্পাদনা]

ইসলাম মধ্যপ্রাচ্যের বৃহত্তম ধর্ম। মুসলিম পুরুষরা একটি মসজিদে নামাজের সময় সিজদা করছে।

ধর্মের ক্ষেত্রে মধ্যপ্রাচ্য খুবই বৈচিত্র্যময়। কারণ অনেক প্রধান ধর্মের উৎপত্তি এখানেই হয়েছে। ইসলাম হল মধ্যপ্রাচ্যের বৃহত্তম বড় ধর্ম। তবে সেখান থেকে উদ্ভূত অন্যান্য ধর্ম, যেমন: ইহুদিখ্রিস্টান ধর্মেরও অনেক অনুসারী রয়েছে।[৫৪] খ্রিস্টান সম্প্রদায়গুলো মধ্যপ্রাচ্যে একটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে [৫৫] এবং তারা লেবাননের মোট জনসংখ্যার ৪০.৫% গঠন করেছে। লেবাননের রাষ্ট্রপতি, মন্ত্রিসভার অর্ধেক এবং সংসদের অর্ধেক সদস্য লেবাননের বিভিন্ন খ্রিস্টান সংস্কৃতির অনুসরণ করে। এছাড়া গুরুত্বপূর্ণ সংখ্যালঘু ধর্মগুলো হল: বাহাই ধর্ম, ইয়ারসানি ধর্ম, ইয়াজিদি,জরথুষ্ট্রীয়, মেন্ডীয়বাদ, দ্রুজ ও শাবাকি। প্রাচীনকালে এ অঞ্চলটি মেসোপটেমীয় ধর্ম, কানানি ধর্ম, মানি ধর্মসহ বিভিন্ন ধর্মের আবাসস্থল ছিল।[৫৬][৫৭]

ভাষা[সম্পাদনা]

ভাষাভাষীর সংখ্যা বিবেচনায় মধ্যপ্রাচ্যে ছয়টি শীর্ষ ভাষা হলো : আরবি, ফার্সি, তুর্কি, কুর্দি, হিব্রুগ্রীকআরবি ও হিব্রু আফ্রো-এশীয় ভাষা পরিবারের সদস্য এবং ফার্সি, কুর্দি ও গ্রীক ভাষা ইন্দো-ইউরোপীয় ভাষা পরিবারের অন্তর্গত। তুর্কি ভাষা তুর্কি ভাষা পরিবারের অন্তর্গত। এছাড়াও মধ্যপ্রাচ্যে প্রায় ২০টি সংখ্যালঘু ভাষা প্রচলিত আছে। আরবি তার সমস্ত উপভাষাসহ মধ্যপ্রাচ্যের সবচেয়ে ব্যাপকভাবে প্রচলিত কথ্য ভাষা। আধুনিক প্রমিত আরবি সমস্ত উত্তর আফ্রিকা এবং পশ্চিম এশিয়ার দেশগুলোর দাপ্তরিক ভাষা। প্রতিবেশী অনারব দেশগুলোর কিছু সংলগ্ন এলাকায় আরবি উপভাষাগুলোও বলা হয়। এটি আফ্রো-এশীয় ভাষার সেমিটীয় শাখার সদস্য। বেশ কিছু আধুনিক দক্ষিণ আরবি ভাষা যেমন: মেহরিসুকাত্রীয় ইয়েমেন এবং ওমানে কথ্যভাষা হিসেবে ব্যবহৃত হয়। সেমেটীয় ভাষা পরিবারের আরেকটি ভাষা আরামীয় ও এর প্রচলিত উপভাষাগুলো প্রধানত অ্যাসিরিয় ও মেন্ডীয়দের মাঝে প্রচলিত আছে। এছাড়াও মিশরে একটি আমাজিঘ-ভাষী সম্প্রদায় রয়েছে।

ফার্সি দ্বিতীয় সর্বাধিক কথ্য ভাষা। যদিও এটি কেবল ইরান ও প্রতিবেশী দেশগুলোর কিছু সীমান্ত এলাকায় বলা হয়; কিন্তু দেশটি এই অঞ্চলের অন্যতম বৃহত্তম ও জনবহুল। ফার্সি ইন্দো-ইউরোপীয় ভাষার পরিবারের ইন্দো-ইরানীয় শাখার অন্তর্গত। এ অঞ্চলে কথিত অন্য পশ্চিম ইরানী ভাষাগুলোর মধ্যে রয়েছে আচোমে, দাইলামি, কুর্দি উপভাষা, সেমানি ও লুরি। তৃতীয়-সর্বোচ্চ কথ্য ভাষা হল তুর্কি এবং এটি মূলত তুরস্কের মধ্যে সীমাবদ্ধ। তবে তুরস্ক এই অঞ্চলের বৃহত্তম এবং জনবহুল দেশগুলোর। তুরস্ক ছাড়াও এটি প্রতিবেশী দেশগুলোতে প্রচলিত আছে। এটি তুর্কি ভাষার একটি সদস্য, যার উৎপত্তি পূর্ব এশিয়ায়। আরেকটি তুর্কি ভাষা হল আজারবাইজানীয় ভাষা। আজারবাইজানী লোকজন ছাড়াও ইরানের আজারিরা এই ভাষায় কথা বলে।

হিব্রু ইস্রায়েলের দুটি সরকারী ভাষার একটি, অন্যটি হল আরবি। হিব্রুতে ইস্রায়েলের জনসংখ্যার ৮০% এর বেশি কথা বলে এবং বাকি ২০% আরবি ব্যবহার করে।গ্রীক সাইপ্রাসের দুটি সরকারী ভাষার একটি এবং সে দেশের প্রধান ভাষা। এছাড়া গ্রীক ভাষাভাষীদের ক্ষুদ্র সম্প্রদায় সমগ্র মধ্যপ্রাচ্য জুড়ে বিদ্যমান আছে। ২০ শতক পর্যন্ত এটি এশিয়া মাইনর (তুর্কি ভাষার পরে সেখানে দ্বিতীয় সর্বাধিক কথ্য ভাষা) ও মিশরে ব্যাপক প্রচলিত ছিল। প্রাচীনকালে প্রাচীন গ্রীক ছিল পশ্চিম মধ্যপ্রাচ্যের অনেক অঞ্চলের ভাষা এবং ইসলামের বিজয়ের আগ পর্যন্ত এটি সেখানে ব্যাপকভাবে কথিত ছিল। ১১ শতকের শেষের দিকে এটি এশিয়া মাইনরের প্রধান কথ্য ভাষাও ছিল। এরপর এটি ধীরে ধীরে তুর্কি ভাষার দ্বারা প্রতিস্থাপিত হয় কারণ আনাতোলিয়ায় তুর্কিদের ব্যাপক প্রসার হয়।

১৯১১ সালে উসমানীয় ক্যালেন্ডার বিভিন্ন ভাষায় দেখানো হয়েছিল। যেমন: উসমানীয় তুর্কি (আরবি লিপিতে), গ্রীক, আর্মেনীয়, হিব্রু, বুলগেরীয়ফরাসি

ইংরেজি আক্রোতিরি ও দেকিলিয়ার অন্যতম সরকারী ভাষা।[৫৮][৫৯] এটি সাধারণত মিশর, জর্ডান, ইরান, কুর্দিস্তান, ইরাক, কাতার, বাহরাইন, সংযুক্ত আরব আমিরাতকুয়েতের মতো দেশে বিশেষ করে মধ্য ও উচ্চ শ্রেণীর মধ্যে দ্বিতীয় ভাষা হিসাবে শেখানো এবং ব্যবহৃত হয়।[৬০][৬১] এটি সংযুক্ত আরব আমিরাতের কিছু আমিরাতের একটি প্রধান ভাষাও। এছাড়া এটি ইস্রায়েলে অ্যাংলোফোন দেশ (যুক্তরাজ্য, যুক্তরাষ্ট্রঅস্ট্রেলিয়া) থেকে আগত ইহুদি অভিবাসীদের মাঝে স্থানীয় ভাষা হিসাবেও ব্যবহৃত হয়। ইসরায়েলে দ্বিতীয় ভাষা হিসাবে ইংরেজি ব্যাপকভাবে বোঝা ও বলা যায়।

মধ্যপ্রাচ্যের কয়েকটি দেশে ফরাসি ভাষা শেখানো হয় এবং লেবাননের অনেক সরকারি সুযোগ-সুবিধা এবং মিডিয়াতে ব্যবহার করা হয়। মিশরসিরিয়ার কিছু প্রাথমিকমাধ্যমিক বিদ্যালয়ে এটি পড়ানোও হয়। মাল্টীয় ভাষা যা একটি সেমেটীয় ভাষা, এটি মিশরের ফ্রাঙ্কো-মাল্টীয় প্রবাসীরা ব্যবহার করে। ইসরায়েলে ফরাসী ইহুদিদের ব্যাপক অভিবাসনের কারণেে এটি ইসরায়েলের প্রায় ২০০,০০০ ইহুদিদের স্থানীয় ভাষাও।এই অঞ্চলে আর্মেনীয় ভাষাভাষীদেরও পাওয়া যায়। জর্জীয় প্রবাসীরা জর্জীয় ভাষায় কথা বলে।

১৯৯০ এর দশকের শেষের দিকে দেশত্যাগের কারণে ইসরায়েলি জনসংখ্যার একটি বড় অংশ রুশ ভাষায় কথা বলে।[৬২] রুশ বর্তমান ইসরায়েলে ব্যবহৃত একটি জনপ্রিয় অনানুষ্ঠানিক ভাষা। খবর, রেডিও ও সাইন বোর্ডগুলো হিব্রু এবং আরবি ভাষার পরে সারা দেশে রুশ ভাষায় পাওয়া যায়। সার্কাসীয়ও এই অঞ্চলের স্থানীয় ভাষা। ইস্রায়েলের প্রায় সমস্ত সার্কাসিয় জাতির লোক এই ভাষায় কথা বলে। এছাড়াও মধ্যপ্রাচ্যের বৃহত্তম রোমানীয়-ভাষী সম্প্রদায় ইজরায়েলে পাওয়া যায়। ১৯৯৫ সালের হিসাব মতে, সেখানে রোমানীয় ভাষায় মোট জনসংখ্যার ৫% কথা বলে থাকে।[নোট ২][৬৩][৬৪]

বাংলা, হিন্দিউর্দু মধ্যপ্রাচ্যের বেশ কয়েকটি দেশের অভিবাসী সম্প্রদায়ের লোকেরা ব্যবহার করে থাকে। যেমন: সৌদি আরব (সেখানে জনসংখ্যার ২০–২৫% দক্ষিণ এশীয়), সংযুক্ত আরব আমিরাত (সেখানে ৫০- ৫৫% দক্ষিণ এশীয়) ও কাতার। এ সকল দেশে প্রচুর সংখ্যক পাকিস্তানী, বাংলাদেশীভারতীয় অভিবাসী রয়েছে।

অর্থনীতি[সম্পাদনা]

মধ্যপ্রাচ্যে তেলগ্যাস পাইপলাইন

মধ্যপ্রাচ্যের অর্থনীতি অত্যন্ত দরিদ্র থেকে শুরু করে (যেমন: গাজাইয়েমেন) থেকে অত্যন্ত ধনী দেশ (যেমন: কাতার এবং সংযুক্ত আরব আমিরাত ) পর্যন্ত বিস্তৃত। ২০০৭-এর হিসাব অনুযায়ী সিআইএ ওয়ার্ল্ড ফ্যাক্টবুক অনুসারে, সামগ্রিকভাবে মধ্যপ্রাচ্যের সমস্ত দেশ ইতিবাচক বৃদ্ধির হার বজায় রাখছে।

২০০৯ সালের ১ জুলাই প্রকাশিত বিশ্বব্যাংকের বিশ্ব উন্নয়ন সূচক ডাটাবেস মতে, ২০০৮ সালে নাম মাত্র জিডিপির পরিপ্রেক্ষিতে মধ্যপ্রাচ্যে তিনটি বৃহত্তম অর্থনীতি ছিল তুরস্ক ($৭৯৪,২২৮), সৌদি আরব ($৪৫৭,৬০১) ও ইরান ($৩৮৫,১৪৩)। [৬৫] মাথাপিছু নামমাত্র জিডিপির ক্ষেত্রে সর্বোচ্চ র‍্যাঙ্কিঙে থাকা দেশগুলো হল কাতার ($৯৩,২০৪), আরব আমিরাত ($৫৫,০২৮), কুয়েত ($৪৫,৯২০) এবং সাইপ্রাস ($৩২,৭৪৫)।[৬৬] এছাড়া তুরস্ক ($১,০২৮,৮৯৭), ইরান ($৮৩৯,৪৩৮) ও সৌদি আরব ($৫৮৯,৫৩১) জিডিপি-পিপিপির পরিপ্রেক্ষিতে বৃহত্তম অর্থনীতি ছিল। [৬৭] মাথাপিছু (পিপিপি)-ভিত্তিক আয়ের ক্ষেত্রে সর্বোচ্চ র‍্যাঙ্কিঙের দেশগুলো হল কাতার ($৮৬,০০৮), কুয়েত ($৩৯,৯১৫), আরব আমিরাত ($৩৮,৮৯৪), বাহরাইন ($৩৪,৬৬২) ও সাইপ্রাস ($২৯,৮৫৩)। মাথাপিছু আয়ের (পিপিপি) পরিপ্রেক্ষিতে মধ্যপ্রাচ্যের সর্বনিম্ন র‍্যাঙ্কিঙের দেশ হল যুদ্ধবিধ্বস্ত গাজা ও স্বায়ত্তশাসিত ফিলিস্তিন (পশ্চিম তীর ) কর্তৃপক্ষ ($১,১০০)।

মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলোর অর্থনৈতিক কাঠামো এই অর্থে ভিন্ন যে, কিছু দেশ শুধুমাত্র তেল এবং তেল-সম্পর্কিত পণ্য (যেমন: সৌদি আরব, আরব আমিরাতকুয়েত) রপ্তানির উপর ব্যাপকভাবে নির্ভরশীল। তবে অন্যদের এর বাইরে একটি অত্যন্ত বৈচিত্র্যময় অর্থনৈতিক ভিত্তি রয়েছে (যেমন: যেমন সাইপ্রাস, ইসরায়েল, তুরস্কমিশর)। মধ্যপ্রাচ্য অঞ্চলে শিল্পের মধ্যে রয়েছে : তেল ও তেল–সম্পর্কিত পণ্য, কৃষি, তুলা, গবাদিপশু, দুগ্ধ, কাপড়, চামড়াজাত পণ্য, অস্ত্রোপচারের যন্ত্রপাতি, প্রতিরক্ষা সরঞ্জাম (যেমন: বন্দুক, গোলাবারুদ, ট্যাঙ্ক, সাবমেরিন, ফাইটার জেট, ইউএভি, মিসাইল ইত্যাদি) এবং আরব আমিরাতবাহরাইনের ক্ষেত্রে ব্যাংকিং অর্থনীতির একটি গুরুত্বপূর্ণ খাত।

মধ্যপ্রাচ্য সাইপ্রাস, তুরস্ক, মিশর, লেবানন ও ইস্রায়েল বাদে পর্যটন অর্থনীতির একটি অপেক্ষাকৃত অনুন্নত এলাকয় পরিণত হয়েছে। কারণ আদিকাল থেকে এই অঞ্চল সামাজিকভাবে রক্ষণশীল প্রকৃতির এবং এর সাথে মধ্যপ্রাচ্যের নির্দিষ্ট কিছু অঞ্চল রাজনৈতিকভাবে অস্থিতিশীল। তবে সাম্প্রতিক বছরগুলোতে সংযুক্ত আরব আমিরাত, বাহরাইনজর্ডান পর্যটন সুবিধার উন্নতি ও পর্যটন-সম্পর্কিত বিধিনিষেধমূলক নীতিগুলো কিছু শিথিল করার কারণে বৃহত্তর সংখ্যক পর্যটকদের আকর্ষণ করতে শুরু করেছে।

মধ্যপ্রাচ্য ও উত্তর আফ্রিকায় অঞ্চলে বেকারত্বের হার উল্লেখযোগ্যভাবে বেশি। বিশেষ করে ১৫-২৯ বছর বয়সী তরুণদের মধ্যে, যা অঞ্চলের মোট জনসংখ্যার ৩০% এর প্রতিনিধিত্ব করে। আন্তর্জাতিক শ্রম সংস্থার মতে ২০০৫ সালে মোট আঞ্চলিক বেকারত্বের হার ছিল ১৩.২%,[৬৮] যুবকদের মধ্যে তা ২৫%[৬৯] এবং দেশ হিসেবে মরক্কোতে ৩৭% ও সিরিয়ায় ৭৩% পর্যন্ত।[৭০]

জলবায়ু পরিবর্তন[সম্পাদনা]

মধ্যপ্রাচ্য এবং উত্তর আফ্রিকার জলবায়ু পরিবর্তন (এমইএনএ) বলতে এই অঞ্চলের জলবায়ুর পরিবর্তন ও দেশগুলোর পরবর্তী প্রতিক্রিয়া, অভিযোজন ও প্রশমন কৌশলগুলোকে বোঝায়।[৭১] ২০১৮ সালে এ অঞ্চলটি ৩.২ বিলিয়ন টন কার্বন ডাই অক্সাইড নির্গত করেছে এবং তারা বিশ্বব্যাপী মোট জনসংখ্যার মাত্র ৬% হওয়া সত্ত্বেও বিশ্বব্যাপী গ্রীনহাউস গ্যাস নির্গমনের (জিএইচজি) ৮.৭% উৎপাদন করেছে।[৭২][৭৩] এই গ্যাস নির্গমনের বেশিরভাগই হয় শক্তি খাত থেকে। ব্যাপক তেলখনির কারণে তেল মধ্যপ্রাচ্য ও উত্তর আফ্রিকার অনেক অর্থনীতির একটি অবিচ্ছেদ্য উপাদান। এছাড়া বিশাল প্রাকৃতিক গ্যাসের মজুদ অঞ্চলের মধ্যে পাওয়া যায়।[৭৪][৭৫][৭৬] এসকল কারণে মধ্যপ্রাচ্য অঞ্চলটি জলবায়ু পরিবর্তনের জন্য সবচেয়ে ঝুঁকিপূর্ণ অবস্থানে রয়েছে এবং এর প্রভাবের মধ্যে রয়েছে খরা পরিস্থিতি বৃদ্ধি, শুষ্কতা, তাপপ্রবাহসমুদ্রপৃষ্ঠের উচ্চতা বৃদ্ধি

জলবায়ু পরিবর্তনের আন্তঃসরকারি প্যানেল (আইপিসিসি) দ্বারা চিহ্নিত জলবায়ু পরিবর্তনের প্রধান প্রভাবগুলোর মধ্যে তীক্ষ্ণ বৈশ্বিক তাপমাত্রা ও সমুদ্রপৃষ্ঠের পরিবর্তন, বৃষ্টিপাতের ধরন পরিবর্তন এবং চরম আবহাওয়ার ঘটনাগুলোর ক্রমবর্ধমান ফ্রিকোয়েন্সি হল জলবায়ু পরিবর্তনের কিছু প্রধান প্রভাব। এই অঞ্চলটি তার শুষ্ক ও আধা-শুষ্ক পরিবেশের কারণে এ ধরনের প্রভাবের জন্য বিশেষভাবে ঝুঁকিপূর্ণ এবং কম বৃষ্টিপাত, উচ্চ তাপমাত্রা ও শুষ্ক মাটির মতো জলবায়ু চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি। আইপিসিসি (আইপিসিসি) অনুমান করে যে, ২১ শতক জুড়ে পরিস্থিতি আরো খারাপ হবে এবং এই অঞ্চলের কিছু অংশ ২১০০ সালের আগে বসবাসের অযোগ্য হয়ে পড়ার ঝুঁকি রয়েছে।[৭৭][৭৮][৭৯][৮০]

জলবায়ু পরিবর্তন এ অঞ্চলে ইতিমধ্যেই দুষ্প্রাপ্য জল এবং কৃষি সম্পদের উপর উল্লেখযোগ্যভাবে চাপ সৃষ্টি করবে বলে আশা করা হচ্ছে, যা এর অন্তর্ভুক্ত সকল দেশের জাতীয় নিরাপত্তা ও রাজনৈতিক স্থিতিশীলতার জন্য হুমকিস্বরূপ হতে পারে। এটি কিছু এই অঞ্চলের কিছু দেশকে প্যারিস চুক্তির মতো পরিবেশগত চুক্তির মাধ্যমে আন্তর্জাতিক পর্যায়ে জলবায়ু পরিবর্তনের মত ইস্যুতে যুক্ত হতে প্ররোচিত করেছে। তবে বর্তমান এই অঞ্চলের দেশগুলোর মধ্যে পুনর্নবীকরণযোগ্য শক্তির বিকাশের দিকে মনোযোগ দিয়ে একটি জাতীয় স্তরে আইন ও নীতিও প্রতিষ্ঠিত হচ্ছে।[৮১][৮২]

চিত্রশালা[সম্পাদনা]

মধ্য আফ্রিকা ও মধ্যপ্রাচ্যের উপর এই ভিডিওটি আন্তর্জাতিক মহাকাশ স্টেশন থেকে অভিযান ২৯-এর ক্রু দ্বারা তোলা হয়েছিল।
সাহারা মরুভূমি ও মধ্যপ্রাচ্যের এই ভিডিওটি আন্তর্জাতিক মহাকাশ স্টেশন থেকে অভিযান ২৯-এর ক্রু দ্বারা তোলা হয়েছে।
তুর্কমেনিস্তান থেকে শুরু হওয়া একটি পাস, কাস্পিয়ান সাগর থেকে দক্ষিণ-পূর্ব চীন থেকে, হংকং এর ঠিক উত্তর-পশ্চিমে।

আরও দেখুন[সম্পাদনা]

পাদটীকা[সম্পাদনা]

  1. ইতালীয় ভাষায় "Vicino Oriente" (প্রাচ্যের নিকটবর্তী) অভিব্যক্তিটি পূর্বে তুরস্ককে বোঝাতে ব্যাপকভাবে ব্যবহৃত হয়েছিল এবং মধ্যপ্রাচ্য বা সমস্ত পূর্ব এশিয়া বোঝাতে Estremo Oriente (দূর পূর্ব বা চরম প্রাচ্য) ব্যবহার করা হয়েছিল।
  2. ইসরায়েলের ১৯৯৩ সালের পরিসংখ্যান অনুসারে, ইস্রায়েলে ২৫০,০০০ রোমানীয় ভাষাভাষী মানুষ ছিল এবং তখন দেশটির জনসংখ্যা ছিল ৫,৫৪৮,৫২৩ (১৯৯৫ সালের আদমশুমারি)

তথ্যসূত্র[সম্পাদনা]

  1. Population 1971–2010 (pdf ওয়েব্যাক মেশিনে আর্কাইভকৃত ২০১২-০১-০৬ তারিখে p. 89) IEA (OECD/ World Bank) (original population ref OECD/ World Bank e.g. in IEA Key World Energy Statistics 2010 p. 57)
  2. http://religions.findthedata.org/compare/15-31/Sunni-Islam-vs-Islam-General
  3. https://www.bbc.co.uk/news/world-middle-east-11509256
  4. https://en.wikipedia.org/wiki/Religion_in_the_Middle_East
  5. "Middle East in whose world?"web.archive.org। ২০০৬-১০-০৮। ২০০৬-১০-০৮ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২০২৩-০২-০৪ 
  6. Lewis, Bernard (১৯৬৫)। The Middle East and the West। পৃষ্ঠা 9। 
  7. "Don't Call Me Middle Eastern"Raseef 22 (ইংরেজি ভাষায়)। ২০২১-০৭-১৬। সংগ্রহের তারিখ ২০২৩-০২-০৪ 
  8. Cairo, Michael F. (২০১২-১০-১৮)। The Gulf: The Bush Presidencies and the Middle East (ইংরেজি ভাষায়)। University Press of Kentucky। আইএসবিএন 978-0-8131-3672-1 
  9. History of the Office of the Secretary of Defense: The formative years, 1947-1950 (ইংরেজি ভাষায়)। Government Printing Office। আইএসবিএন 978-0-16-087640-0 
  10. Kahana, Ephraim; Suwaed, Muhammad (২০০৯-০৪-১৩)। Historical Dictionary of Middle Eastern Intelligence (ইংরেজি ভাষায়)। Scarecrow Press। আইএসবিএন 978-0-8108-6302-6 
  11. MacQueen, Benjamin (2013). An Introduction to Middle East Politics: Continuity, Change, Conflict and Co-operation. SAGE. p. 5.আইএসবিএন https://en.m.wikipedia.org/wiki/Special:BookSources/9781446289761 |আইএসবিএন= এর মান পরীক্ষা করুন: invalid character (সাহায্য) 
  12. Shoup, John A. (২০১১-১০-৩১)। Ethnic Groups of Africa and the Middle East: An Encyclopedia (ইংরেজি ভাষায়)। ABC-CLIO। আইএসবিএন 978-1-59884-362-0 
  13. "Fertile Crescent"Wikipedia (ইংরেজি ভাষায়)। ২০২৩-০১-২২। 
  14. "Middle East"Wikipedia (ইংরেজি ভাষায়)। ২০২৩-০২-০১। 
  15. "The Greater Middle East Initiative"www.aljazeera.com (ইংরেজি ভাষায়)। সংগ্রহের তারিখ ২০২৩-০২-১৩ 
  16. "What is SWANA?"aapirc.ucsc.edu। সংগ্রহের তারিখ ২০২৩-০২-১৩ 
  17. "Maghreb. The Columbia Encyclopedia, Sixth Edition. 2001-05"web.archive.org। ২০০৭-০৯-২৯। Archived from the original on ২০০৭-০৯-২৯। সংগ্রহের তারিখ ২০২৩-০২-১৩ 
  18. Beaumont, Blake এবং Wagstaff 1988
  19. Koppes, CR (১৯৭৬)। "Captain Mahan, General Gordon and the origin of the term "Middle East"": 95–98। ডিওআই:10.1080/00263207608700307 
  20. Fromkin, David (১৯৮৯)। A Peace to end all Peace। পৃষ্ঠা 224আইএসবিএন 978-0-8050-0857-9 
  21. Palmer, Michael A. Guardians of the Persian Gulf: A History of America's Expanding Role in the Persian Gulf, 1833–1992. New York: The Free Press, 1992. আইএসবিএন ০-০২-৯২৩৮৪৩-৯ pp. 12–13.
  22. Laciner, Dr. Sedat. "Is There a Place Called 'the Middle East'? ওয়েব্যাক মেশিনে আর্কাইভকৃত ২০০৭-০২-২০ তারিখে", The Journal of Turkish Weekly, June 2, 2006. Retrieved January 10, 2007.
  23. Adelson, P. David (১৯৯৫)। "The Surgical Management of Epilepsy in Children"Contemporary Neurosurgery17 (23): 1–7। আইএসএসএন 0163-2108ডিওআই:10.1097/00029679-199517230-00001 
  24. Roger Adelson (১৯৯৫)। London and the invention of the Middle East। Internet Archive। Yale University Press। আইএসবিএন 978-0-300-06094-2 
  25. Adelson 1995
  26. Davison, Roderic H. (১৯৬০)। "Where is the Middle East?": 665–75। জেস্টোর 20029452ডিওআই:10.2307/20029452 
  27. Held, Colbert C. (২০০০)। Middle East Patterns: Places, Peoples, and Politics। Westview Press। পৃষ্ঠা 7আইএসবিএন 978-0-8133-8221-0 
  28. Culcasi, Karen (২০১০)। "Constructing and naturalizing the Middle Easr": 583–597। জেস্টোর 25741178ডিওআই:10.1111/j.1931-0846.2010.00059.x 
  29. "How the Middle East was invented - The Washington Post"The Washington Post 
  30. "Where Is the Middle East? | Center for Middle East and Islamic Studies" 
  31. Clyde, Paul Hibbert, and Burton F. Beers. The Far East: A History of Western Impacts and Eastern Responses, 1830-1975 (1975). online
  32. Norman, Henry. The Peoples and Politics of the Far East: Travels and studies in the British, French, Spanish and Portuguese colonies, Siberia, China, Japan, Korea, Siam and Malaya (1904) online
  33. "'Near East' is Mideast, Washington Explains"The New York Times। আগস্ট ১৪, ১৯৫৮। অক্টোবর ১৫, ২০০৯ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২০০৯-০১-২৫ (সদস্যতা প্রয়োজনীয়)
  34. Khraish, Louay। "Don't Call Me Middle Eastern"। Raseef 22। 
  35. Hanafi, Hassan। "The Middle East, in whose world? (Primary Reflections)"। Nordic Society for Middle Eastern Studies (The fourth Nordic conference on Middle Eastern Studies: The Middle East in globalizing world Oslo, 13–16 August 1998)। ৮ অক্টোবর ২০০৬ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। 
  36. Shohat, Ella। "Redrawing American Cartographies of Asia"। City University of New York। ২০০৭-০৩-১২ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২০০৭-০১-১২ 
  37. Goldstein, Norm. The Associated Press Stylebook and Briefing on Media Law. New York: Basic Books, 2004. আইএসবিএন ০-৪৬৫-০০৪৮৮-১ p. 156
  38. "Naher Osten"Wikipedia (জার্মান ভাষায়)। ২০২৩-০১-২৪। 
  39. Anderson, Ewan W.; William Bayne Fisher (২০০০)। The Middle East: Geography and Geopolitics। Routledge। পৃষ্ঠা 12–13। 
  40. "World Economic Outlook Database"International Monetary Fund। ১৯ সেপ্টেম্বর ২০২২। সংগ্রহের তারিখ সেপ্টে ১৯, ২০২২ 
  41. "Report for Selected Countries and Subjects"International Monetary Fund। সেপ্টেম্বর ২০১৯। সংগ্রহের তারিখ সেপ্টে ১৪, ২০২২ 
  42. Novikova, Gayane (ডিসেম্বর ২০০০)। "Armenia and the Middle East" (পিডিএফ)। Middle East Review of International Affairs। ২১ আগস্ট ২০১৪ তারিখে মূল (পিডিএফ) থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ১৪ আগস্ট ২০১৪ 
  43. Haeri, Safa (২০০৪-০৩-০৩)। "Concocting a 'Greater Middle East' brew"Asia Times। ২০০৪-০৪-০৭ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২০০৮-০৮-২১ 
  44. Ottaway, Marina & Carothers, Thomas (2004-03-29), The Greater Middle East Initiative: Off to a False Start ওয়েব্যাক মেশিনে আর্কাইভকৃত ২০০৯-০৩-১২ তারিখে, Policy Brief, Carnegie Endowment for International Peace, 29, pp. 1–7
  45. Middle East ওয়েব্যাক মেশিনে আর্কাইভকৃত ২০১৬-০৪-১৫ তারিখে What Is The Middle East And What Countries Are Part of It? worldatlas.com. Retrieved 16 April 2016.
  46. "The World's First Temple"Archaeology magazine। নভেম্বর–ডিসেম্বর ২০০৮। পৃষ্ঠা 23। 
  47. Russell 1985
  48. Goldschmidt (1999), p. 8
  49. লুইস ফসেট : International Relations of the Middle East. (অক্সফোর্ড ইউনিভার্সিটি প্রেস, নিউইয়র্ক, ২০০৫) 
  50. Hassan, Islam; Dyer, Paul (২০১৭)। "The State of Middle Eastern Youth.": 3–12। ডিওআই:10.1111/muwo.12175। ২০১৭-০৪-০৩ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। 
  51. "IOM Intra regional labour mobility in Arab region Facts and Figures (English)" (পিডিএফ)। ২০১১-০৪-৩০ তারিখে মূল (পিডিএফ) থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২০১২-১০-৩১ 
  52. Baumer, Christoph (২০১৬)। The Church of the East: An Illustrated History of Assyrian Christianity। Bloomsbury Publishing। পৃষ্ঠা 276। আইএসবিএন 9781838609344 
  53. Cecolin, Alessandra (২০১৫)। Iranian Jews in Israel: Between Persian Cultural Identity and Israeli Nationalism। Bloomsbury Publishing। পৃষ্ঠা 138। আইএসবিএন 9780857727886 
  54. Jenkins, Philip (২০২০)। The Rowman & Littlefield Handbook of Christianity in the Middle East। Rowman & Littlefield। পৃষ্ঠা XLVIII। আইএসবিএন 9781538124185 
  55. Curtis, Michael (২০১৭)। Jews, Antisemitism, and the Middle East। Routledge। পৃষ্ঠা 173। আইএসবিএন 9781351510721 
  56. Nelida Fuccaro (১৯৯৯)। The Other Kurds: Yazidis in Colonial Iraq। I.B. Tauris। পৃষ্ঠা 9। আইএসবিএন 1860641709 
  57. C. Held, Colbert (২০০৮)। Middle East Patterns: Places, People, and Politics। Routledge। পৃষ্ঠা 109। আইএসবিএন 9780429962004 
  58. "Europe :: Akrotiri — The World Factbook - Central Intelligence Agency"। CIA। ২৫ অক্টোবর ২০২১। 
  59. "Europe :: Dhekelia — The World Factbook - Central Intelligence Agency"। CIA। ২৫ অক্টোবর ২০২১। 
  60. "World Factbook – Jordan"। ২০ অক্টোবর ২০২১। 
  61. "Kuwait"। Central Intelligence Agency। অক্টোবর ১৯, ২০২১ – CIA.gov-এর মাধ্যমে। 
  62. Dowty 2004
  63. "Reports of about 300,000 Jews that left the country after WW2"Eurojewcong.org। ২০১০-০৮-১৩ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২০১০-০৭-০৭ 
  64. "Evenimentul Zilei"Evz.ro। ২০০৭-১২-২৪ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২০১০-০৭-০৭ 
  65. The World Bank: World Economic Indicators Database. GDP (Nominal) 2008. ওয়েব্যাক মেশিনে আর্কাইভকৃত ২০০৯-০৯-১২ তারিখে Data for 2008. Last revised on July 1, 2009.
  66. Data refer to 2008. World Economic Outlook Database-October 2009, International Monetary Fund. Retrieved October 1, 2009.
  67. The World Bank: World Economic Indicators Database. GDP (PPP) 2008. ওয়েব্যাক মেশিনে আর্কাইভকৃত ২০১৪-০২-০৯ তারিখে Data for 2008. Last revised on July 1, 2009.
  68. "Unemployment Rates Are Highest in the Middle East"। Progressive Policy Institute। আগস্ট ৩০, ২০০৬। জুলাই ১৪, ২০১০ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ জুলাই ৩১, ২০০৮ 
  69. Navtej Dhillon; Tarek Yousef (২০০৭)। "Inclusion: Meeting the 100 Million Youth Challenge"। Shabab Inclusion। ২০০৮-১১-০৯ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। 
  70. Hilary Silver (ডিসেম্বর ১২, ২০০৭)। "Social Exclusion: Comparative Analysis of Europe and Middle East Youth"Middle East Youth Initiative Working Paper। Shabab Inclusion। আগস্ট ২০, ২০০৮ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ জুলাই ৩১, ২০০৮ 
  71. "Climate Change Law and Policy in the Middle East and North Africa Region"Routledge & CRC Press (ইংরেজি ভাষায়)। সংগ্রহের তারিখ ২০২৩-০২-০৫ 
  72. "Population, total - Middle East & North Africa, World | Data"data.worldbank.org। সংগ্রহের তারিখ ২০২৩-০২-০৫ 
  73. "CO2 Emissions | Global Carbon Atlas"www.globalcarbonatlas.org। সংগ্রহের তারিখ ২০২৩-০২-০৫ 
  74. openresearch.surrey.ac.uk https://openresearch.surrey.ac.uk/esploro/outputs/journalArticle/An-Overview-of-Monitoring-and-Reduction/99513363002346#file-0। সংগ্রহের তারিখ ২০২৩-০২-০৫  |শিরোনাম= অনুপস্থিত বা খালি (সাহায্য)
  75. Al-mulali, Usama (২০১১-১০-০১)। "Oil consumption, CO2 emission and economic growth in MENA countries"Energy (ইংরেজি ভাষায়)। 36 (10): 6165–6171। আইএসএসএন 0360-5442ডিওআই:10.1016/j.energy.2011.07.048 
  76. Tagliapietra, Simone (২০১৯-১১-০১)। "The impact of the global energy transition on MENA oil and gas producers"Energy Strategy Reviews (ইংরেজি ভাষায়)। 26: 100397। আইএসএসএন 2211-467Xডিওআই:10.1016/j.esr.2019.100397 
  77. IPCC, 2014: Climate Change 2014: Synthesis Report. Contribution of Working Groups I, II and III to the Fifth Assessment Report of the Intergovernmental Panel on Climate Change [Core Writing Team, R.K. Pachauri and L.A. Meyer (eds.)]. IPCC, Geneva, Switzerland, 151 pp. 
  78. Gornall, Jonathan (২০১৮-১২-২১)। "With climate change, life in the Gulf could become impossible"www.euractiv.com (ইংরেজি ভাষায়)। সংগ্রহের তারিখ ২০২৩-০২-০৫ 
  79. Gornall, Jonathan (২০১৮-১২-২১)। "With climate change, life in the Gulf could become impossible"www.euractiv.com (ইংরেজি ভাষায়)। সংগ্রহের তারিখ ২০২৩-০২-০৫ 
  80. "International Standard Serial Number"Wikipedia (ইংরেজি ভাষায়)। ২০২৩-০২-০২। 
  81. "Climate Change Law and Policy in the Middle East and North Africa Region"Routledge & CRC Press (ইংরেজি ভাষায়)। সংগ্রহের তারিখ ২০২৩-০২-০৫ 
  82. Brauch, Hans Günter (২০১২)। Scheffran, Jürgen; Brzoska, Michael; Brauch, Hans Günter; Link, Peter Michael; Schilling, Janpeter, সম্পাদকগণ। Policy Responses to Climate Change in the Mediterranean and MENA Region during the Anthropocene (ইংরেজি ভাষায়)। Berlin, Heidelberg: Springer। পৃষ্ঠা 719–794। আইএসবিএন 978-3-642-28626-1ডিওআই:10.1007/978-3-642-28626-1_37 

আরও পড়ুন[সম্পাদনা]

  • Adelson, Roger (১৯৯৫)। London and the Invention of the Middle East: Money, Power, and War, 1902–1922.। Yale University Press। আইএসবিএন 978-0-300-06094-2 
  • Anderson, R; Seibert, R; Wagner, J. (২০০৬)। Politics and Change in the Middle East (8th সংস্করণ)। Prentice-Hall। 
  • Barzilai, Gad; Aharon, Klieman; Gil, Shidlo (১৯৯৩)। The Gulf Crisis and its Global Aftermathবিনামূল্যে নিবন্ধন প্রয়োজন। Routledge। আইএসবিএন 978-0-415-08002-6 
  • Barzilai, Gad (১৯৯৬)। Wars, Internal Conflicts and Political Order। State University of New York Press। আইএসবিএন 978-0-7914-2943-3 
  • Beaumont, Peter; Blake, Gerald H; Wagstaff, J. Malcolm (১৯৮৮)। The Middle East: A Geographical Study। David Fulton। আইএসবিএন 978-0-470-21040-6 
  • Bishku, Michael B. (২০১৫)। "Is the South Caucasus Region a Part of the Middle East?"। Journal of Third World Studies32 (1): 83–102। জেস্টোর 45178576 
  • Cleveland, William L., and Martin Bunton. A History Of The Modern Middle East (6th ed. 2018 4th ed. online
  • Cressey, George B. (1960). Crossroads: Land and Life in Southwest Asia. Chicago, IL: J.B. Lippincott Co. xiv, 593 pp. ill. with maps and b&w photos.
  • Fischbach, ed. Michael R. Biographical encyclopedia of the modern Middle East and North Africa (Gale Group, 2008).
  • Freedman, Robert O. (1991). The Middle East from the Iran-Contra Affair to the Intifada, in series, Contemporary Issues in the Middle East. 1st ed. Syracuse, NY: Syracuse University Press. x, 441 pp. আইএসবিএন ০-৮১৫৬-২৫০২-২ pbk.
  • Goldschmidt, Arthur Jr (১৯৯৯)। A Concise History of the Middle East। Westview Press। আইএসবিএন 978-0-8133-0471-7 
  • Halpern, Manfred. Politics of Social Change: In the Middle East and North Africa (Princeton University Press, 2015).
  • Ismael, Jacqueline S., Tareq Y. Ismael, and Glenn Perry. Government and politics of the contemporary Middle East: Continuity and change (Routledge, 2015).
  • Lynch, Marc, ed. The Arab Uprisings Explained: New Contentious Politics in the Middle East (Columbia University Press, 2014). p. 352.
  • Palmer, Michael A. (১৯৯২)। Guardians of the Persian Gulf: A History of America's Expanding Role in the Persian Gulf, 1833–1992। New York: The Free Press। আইএসবিএন 978-0-02-923843-1 
  • Reich, Bernard. Political leaders of the contemporary Middle East and North Africa: a biographical dictionary (Greenwood Publishing Group, 1990).
  • Vasiliev, Alexey. Russia’s Middle East Policy: From Lenin to Putin (Routledge, 2018).

বহিঃসংযোগ[সম্পাদনা]