জিকির

উইকিপিডিয়া, মুক্ত বিশ্বকোষ থেকে
(যিকির থেকে পুনর্নির্দেশিত)
জিকির

জিকির বা যিকর অর্থ হল স্মরণ করা বা উল্লেখ করা। এটি হলো ইসলাম ধর্মের প্রার্থনার মাধ্যম যাতে আল্লাহকে স্মরণ করার জন্য বিশেষ কিছু শব্দ বা বাক্যাংশ বারবার উচ্চারণ করা হয়। জিকিরের মাধ্যমে ইসলাম ধর্মাবলম্বীরা আল্লাহকে স্মরণ করে থাকে।

জিকির শব্দটি আরবী ভাষার “ذِكْر ” ( যিকরুন) থেকে এসেছে। যার অর্থ আল্লার নাম স্মরণ করা। জিকির ইসলাম ধর্মের একটি পবিত্র কাজ হিসেবে গন্য করা হয়। একাকী বা সমষ্টিগতভাবে যিকির করা যেতে পারে। এটি পুতির তৈরি মালা (মিসবাহা, " مِسْبَحَة ") বা হাতের আঙুলের সাহায্যে গণনা করা হয়। যে ব্যক্তি যিকির পাঠ করেন তাকে জাকির (ذَاكِر) বলা হয়, আক্ষরিক অর্থে "যে স্মরণ করে"।

যিকিরের  বিষয়বস্তুর মধ্যে রয়েছে আল্লাহর  নাম ও  হাদিস-কুরআন থেকে নেওয়া দুআ। জিকির সম্পর্কিত অনেক হাদিস রয়েছে এবং ইসলাম ধর্মের ধর্মীয় বই পবিত্র কুরআনে এই বিষয়ে বর্ণনা দেয়া আছে। একটি হাদিস থেকে জানা গিয়েছে জবানে হালকা (বলতে সহজ) কিন্তু মিজানের পাল্লায় ভারি হয়। "সুবহানাল্লাহি ওয়া বিহামদিহি সুবহানাল্লাহীল আযিম।" এছাড়া আরো কিছু জিকির রয়েছে সুবাহানাল্লাহ, আলহামদুলিল্লাহ, লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ, আল্লাহু আকবর, আল্লাহু।

গুরুত্ব[সম্পাদনা]

কুরআনের বেশ কিছু আয়াত রয়েছে যেগুলো "আল্লাহর ইচ্ছা" ,"আল্লাহ ভালো জানেন" এবং "যদি এটা আল্লাহর ইচ্ছা হয়" এর মত বাক্যাংশ বলে আল্লাহকে স্মরণ করার গুরুত্বের উপর জোর দেওয়া হয়েছে । এটাই হলো  যিকিরের  ভিত্তি।সূরা আল-কাহফ (১৮), আয়াত ২৪-এ বলা হয়েছে যে একজন ব্যক্তি "আল্লাহর ইচ্ছা " (ইনশাআল্লাহ) বলতে ভুলে যায়, অবিলম্বে এই বলে আল্লাহকে স্মরণ করা উচিত, "আমি আশা করি আমার রব আমাকে এর চেয়েও অধিকতর সৎপথের নিকটতর পথ প্রদর্শন করবেন।" অন্যান্য আয়াতের মধ্যে রয়েছে সূরা আল আহজাব (৩৩), আয়াত ৪১, "হে ঈমানদারগণ! ঘনঘন স্মরণে আল্লাহকে স্মরণ কর", এবং সূরা আর-রাদ (১৩), আয়াত ২৮ , "যারা ঈমান এনেছে এবং যাদের অন্তর আল্লাহর স্মরণে প্রশান্তি লাভ করে।" দেখুন, আল্লাহর স্মরণেই অন্তর প্রশান্তি লাভ করে"।


মুসলমানরা বিশ্বাস করে স্বর্গের (জান্নাত) উচ্চ স্তরে প্রবেশ করার এবং আল্লাহর একেশ্বরবাদী একত্বকে মহিমান্বিত করার অন্যতম সেরা উপায় হল যিকির।

সমস্ত মুসলিম সম্প্রদায় পৃথক জপমালাকে ধ্যানের একটি পদ্ধতি হিসাবে সমর্থন করে, যার লক্ষ্য হল শান্তির অনুভূতি, জাগতিক মূল্যবোধ (দুনিয়া) থেকে বিচ্ছিন্ন হওয়া এবং সাধারণভাবে, ইমান (বিশ্বাস) শক্তিশালী করা।

সাধারণ প্রকারভেদ[সম্পাদনা]

আরবি বাংলায় উচ্চারণ বাংলা অনুবাদ
بِسْمِ ٱللَّٰهِ ٱلرَّحْمَٰنِ ٱلرَّحِيمِ বিসমিল্লাহির রহমানির রাহিম আল্লাহর নামে, যিনি পরম করুণাময়, বিশেষভাবে-করুণাময়।
أَعُوذُ بِٱللَّٰهِ مِنَ ٱلشَّيْطَانِ ٱلرَّجِيمِ আউজুবিল্লাহি মিনাশ শাইত্বনির রজীম আমি নির্বাসিত শয়তান থেকে আল্লাহর আশ্রয় চাই।
أَعُوذُ بِٱللَّٰهِ ٱلسَّمِيعِ ٱلْعَلِيمِ مِنَ ٱلشَّيْطَانِ ٱلرَّجِيمِ আউযুবিল্লাহিস সামিইল আলিমি মিনাশ শাইত্বনির রজীম আমি নির্বাসিত শয়তান থেকে সর্বশ্রোতা, সর্বজ্ঞ আল্লাহর কাছে আশ্রয় প্রার্থনা করছি।
سُبْحَانَ ٱللَّٰهِ সুবহানাল্লাহ আল্লাহ মহিমান্বিত।
ٱلْحَمْدُ لِلَّٰهِ আলহামদুলিল্লাহ সমস্ত প্রশংসা আল্লাহর জন্য।
لَا إِلَٰهَ إِلَّا ٱللَّٰهُ লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ আল্লাহ ছাড়া কোন মাবুদ নেই।
ٱللَّٰهُ أَكْبَرُ আল্লাহু আকবার আল্লাহ [সবকিছুর চেয়ে] মহান।
أَسْتَغْفِرُ ٱللَّٰهَ আস্তাগফিরুল্লাহ আমি আল্লাহর কাছে ক্ষমা চাই।
أَسْتَغْفِرُ ٱللَّٰهَ رَبِّي وَأَتُوبُ إِلَيْهِ আস্তাগফিরুল্লাহা রাব্বি ওয়া আতুবু ইলাইহি আমি আমার প্রভু আল্লাহর কাছে ক্ষমা প্রার্থনা করছি এবং তাঁর কাছে তওবা করছি।
سُبْحَانَكَ ٱللَّٰهُمَّ সুবহানাকা আল্লাহুম্মা হে আল্লাহ, তুমি মহিমান্বিত।
سُبْحَانَ ٱللَّٰهِ وَبِحَمْدِهِ সুবহানাল্লাহি ওয়া বিহামদিহি মহিমান্বিত আল্লাহ এবং সকল প্রশংসা তাঁর।
سُبْحَانَ رَبِّيَ ٱلْعَظِيمِ وَبِحَمْدِهِ সুবহানা রব্বিয়াল আযীম ওয়া বিহামদিহি মহিমান্বিত আমার আল্লাহ, মহান, এবং সকল প্রশংসা তাঁর।
سُبْحَانَ رَبِّيَ ٱلْأَعْلَىٰ وَبِحَمْدِهِ সুবহানা রাব্বিয়াল আলা ওয়া বিহামদিহি মহিমান্বিত আমার আল্লাহ,সর্বোচ্চ, এবং সকল প্রশংসা তাঁর।
لَا حَوْلَ وَلَا قُوَّةَ إِلَّا بِٱللَّٰهِ ٱلْعَلِيِّ ٱلْعَظِيمِ লা হাওলা ওয়ালা কুওয়াতা ইল্লা বিল্লাহিল আলিউল আজিম মহান আল্লাহ ছাড়া কোন শক্তি নেই।
لَا إِلَٰهَ إِلَّا أَنْتَ سُبْحَانَكَ إِنِّي كُنْتُ مِنَ ٱلظَّالِمِينَ লা ইলাহা ইল্লা আনতা সুবহানাকা ইন্নি কুন্তু মিনাজজলিমীন তুমি ছাড়া কোন উপাস্য নেই, তুমি মহিমান্বিত! আমি তো জালেমদের অন্তর্ভুক্ত হয়ে গেছি।
حَسْبُنَا ٱللَّٰهُ وَنِعْمَ ٱلْوَكِيلُ হাসবুনাল্লাহি ওয়া নি'মাল ওয়াকিল আল্লাহই আমাদের জন্য যথেষ্ট এবং তিনি একজন চমৎকার আমানতদার।
إِنَّا لِلَّٰهِ وَإِنَّا إِلَيْهِ رَاجِعُونَ ইন্না লিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজিউন নিশ্চয়ই আমরা আল্লাহর জন্য এবং অবশ্যই আমরা তাঁর কাছেই ফিরে যাব।
مَا شَاءَ ٱللَّٰهُ كَانَ وَمَا لَمْ يَشَأْ لَمْ يَكُنْ মাশা আল্লাহু কানা ওয়ামা লাম ইয়াশা লাম ইয়াকুন্   আল্লাহ যা চান তা হবে, আর আল্লাহ যা চান না তা হবে না।
إِنْ شَاءَ ٱللَّٰهُ ইনশাআল্লাহ আল্লাহ যদি চান।
مَا شَاءَ ٱللَّٰهُ মাশাআল্লাহ আল্লাহ যা চান।
بِإِذْنِ ٱللَّٰهِ বিইজনিল্লাহ আল্লাহর অনুমতি নিয়ে।
جَزَاكَ ٱللَّٰهُ خَيْرًا জাজাকাল্লাহ খাইরান আল্লাহ আপনাকে উত্তম প্রতিদান দিন।
بَارَكَ ٱللَّٰهُ فِيكَ বারাকাল্লাহু ফিক আল্লাহ তোমার মঙ্গল করুক।
فِي سَبِيلِ ٱللَّٰهِ ফি সাবিলিল্লাহ আল্লাহর পথে।
لَا إِلَٰهَ إِلَّا ٱللَّٰهُ مُحَمَّدٌ رَسُولُ ٱللَّٰهِ লা ইলাহা ইল্লাল্লাহু মুহাম্মাদুর রাসূলুল্লাহ আল্লাহ ছাড়া কোন উপাস্য নেই, মুহাম্মদ আল্লাহর রসূল।
لَا إِلَٰهَ إِلَّا ٱللَّٰهُ مُحَمَّدٌ رَسُولُ ٱللَّٰهِ عَلِيٌّ وَلِيُّ ٱللَّٰ লা ইলাহা ইল্লাল্লাহু মুহাম্মাদুর রাসূলুল্লাহি আলিউন ওয়ালীউল্লাহ আল্লাহ ছাড়া কোন উপাস্য নেই, মুহাম্মদ আল্লাহর রসূল, আলী আল্লাহর উপাস্য। (সাধারণত শিয়া মুসলমানরা আবৃত্তি করে)
أَشْهَدُ أَنْ لَا إِلَٰهَ إِلَّا ٱللَّٰهُ وَأَشْهَدُ أَنَّ مُحَمَّدًا رَسُولُ ٱللَّٰهِ আশহাদু  আল্- লা ইলাহা ইল্লাল্লাহু ওয়া আশহাদু  আন্না মুহাম্মাদান ওয়া রাসূলুল্লাহ আমি সাক্ষ্য দিচ্ছি যে, আল্লাহ ব্যতীত কোন উপাস্য নেই এবং আমি সাক্ষ্য দিচ্ছি যে মুহাম্মদ আল্লাহর রসূল।
َشْهَدُ أَنْ لَا إِلَٰهَ إِلَّا ٱللَّٰهُ وَأَشْهَدُ أَنَّ مُحَمَّدًا رَسُولُ ٱللَّٰهِ وَأَشْهَدُ أَنَّ عَلِيًّا وَلِيُّ ٱللَّٰهِ আশহাদু  আল্লাহ ইলাহা ইল্লাল্লাহু ওয়া আশহাদু  আন্না মুহাম্মাদান আব্দুহু ওয়া রাসূলুল্লাহি ওয়া আশহাদু  আন্না আলিয়ান ওয়ালীউল্লাহ আমি সাক্ষ্য দিচ্ছি যে, আল্লাহ ব্যতীত কোন উপাস্য নেই, এবং আমি সাক্ষ্য দিচ্ছি যে মুহাম্মদ আল্লাহর রসূল, এবং আমি সাক্ষ্য দিচ্ছি যে আলী আল্লাহর উপাস্য। (সাধারণত শিয়া মুসলমানরা আবৃত্তি করে)
ٱللَّٰهُمَّ صَلِّ عَلَىٰ مُحَمَّدٍ وَآلِ مُحَمَّدٍ আল্লাহুম্মা সাল্লি আলা মুহাম্মাদিন ওয়া আলি মুহাম্মদ হে আল্লাহ, মুহাম্মাদ ও মুহাম্মাদের বংশধরদের উপর বরকত বর্ষণ করুন।

বাক্যাংশ এবং অভিব্যক্তি[সম্পাদনা]

আল্লাহকে  আহ্বান করে এমন অসংখ্য প্রচলিত বাক্যাংশ এবং অভিব্যক্তি রয়েছে।

নাম বাক্যাংশ উদ্ধৃতি

(কুরআন বা সুন্নাহ)

তাকবীর

تَكْبِير

আল্লাহু আকবার

ٱللَّٰهُ أَكْبَرُ আল্লাহ  [সবকিছুর চেয়ে] মহান

৯:৭২, ২৯:৪৫, ৪০:১০
তাসবীহ

تَسْبِيح

সুবহানাল্লাহ

سُبْحَانَ ٱللَّٰهِ আল্লাহর  মহিমা

২৩:৯১, ২৮:৬৮, ৩৭:১৫৯, ৫২:৪৩, ৫৯:২৩
তাহমিদ

تَحْمِيد

আল-হামদু লি-ল্লাহ

ٱلْحَمْدُ لِلَّٰهِ সমস্ত প্রশংসা আল্লাহর

১:২, ৬:১, ৬:৪৫, ৭:৪৩, ১০:১০, ১৪:৩৯, ১৬:৭৫, ১৭:১১১, ১৮:১, ২৩:২৮, ২৭:১৫, ২৭:৫৯, ২৭:৯৩, ২৯:৬৩, ৩১:২৫, ৩৪:১, ৩৫:১, ৩৫:৩৪, ৩৭:১৮২, ৩৯:২৯, ৩৯:৭৪, ৩৯:৭৫, ৪০:৬৫
তাহলিল

تَهْلِيل

লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ

لَا إِلَٰهَ إِلَّا ٱللَّٰهُ আল্লাহ ব্যতীত কোন উপাস্য নেই

৩৭:৩৮, ৪৭:১৯
শাহাদাতিন

شَهَادَتَيْن

মুহাম্মাদুন রসূলুল্লাহ

مُحَمَّدٌ رَسُولُ ٱللَّٰهِ মুহাম্মদ আল্লাহর রসূল

৪৮:২৯
তাসমিয়াহ

تَسْمِيَّة

বিস্মিল্লাহির-রাহমানির-রাহিম

بِسْمِ ٱللَّٰهِ ٱلرَّحْمَٰنِ ٱلرَّحِيمِ পরম করুণাময়, দয়াময় আল্লাহর নামে

১:১
ইনশা-আল্লাহ

إِنْ شَاءَ ٱللَّٰهُ

ইন শা'আল্লাহ

إِنْ شَاءَ ٱللَّٰهُ যদি আল্লাহ চান

২:৭০, ১২:৯৯, ১৮:৬৯, ২৮:২৭, ৪৮:২৭
মাশা-আল্লাহ

مَا شَاءَ ٱللَّٰهُ

মা শা'আল্লাহু

مَا شَاءَ ٱللَّٰهُ আল্লাহ  যা চান

৬:১২৮, ৭:১৮৮, ১০:৪৯, ১৮:৩৯, ৮৭:৭