হীরক

উইকিপিডিয়া, মুক্ত বিশ্বকোষ থেকে
হীরক
Seven clear faceted gems, six small stones of similar size and a large one.
চক্রাকারে কাটা হীরকের চমৎকার কয়েকটি উজ্জ্বল খণ্ডিত অংশ
সাধারণ তথ্য
শ্রেণীবিশুদ্ধরূপে প্রাপ্ত
রাসায়নিক সূত্রC
সনাক্তকরণ
পেষক ভর১২.০১ গ্রাম/মোল
বর্ণসাধারণত আদর্শ হীরা হলুদ, বাদামী এবং ধূসর থেকে বর্ণহীন হয়ে থাকে। তবে নীল, সবুজ, কালো, অর্ধ-স্বচ্ছ সাদা, গোলাপী, বেগুনী, কমলা, রক্তাভ এবং লাল বর্ণের হীরাও পাওয়া যায়।
স্ফটিক রীতিঅষ্টতলাকার
স্ফটিক পদ্ধতিপৃষ্ঠতল কেন্দ্রিক ঘনক
বিদারণ১১১ (চতুর্দিকেই যথার্থভাবে)
কাঠিন্য মাত্রা১০ (প্রকৃতিতে প্রাপ্ত পদার্থের মধ্যে সবচেয়ে বেশি)
ডোরা বা বর্ণচ্ছটাবর্ণহীন
আপেক্ষিক গুরুত্ব৩.৫– ০.০১/+০.০১
ঘনত্ব৩.৫ - ৩.৫৩ গ্রাম/ঘন সে.মি.
আলোকিক বৈশিষ্ট্যএক প্রতিসরী
প্রতিসরাঙ্ক২.৪১৮ (৫০০ ন্যানো-মিটারে)
বিচ্ছুরণ০.০৪৪

হীরক বা হীরা বা হীরে হল সর্বাপেক্ষা মূল্যবান একটি রত্ন যা গহনা তৈরিতে বহুল ব্যবহৃত হয়। বর্ণহীন এ রত্নটি একটি মাত্র বিশুদ্ধ উপাদান কার্বন থেকে সৃষ্ট। [১] অন্য ভাষায় হীরক কার্বনের একটি বিশেষ রূপ মাত্র। পৃথিবীতে প্রতি বছর প্রায় ২৬০০০ কে.জি. খনিজ হীরা উত্তোলিত হয় যার মূল্য প্রায় ১০ বিলিয়ন ডলার। কথিত আছে, হীরক সর্বপ্রথম ভারতবর্ষে মূল্যবান হিসেবে খনি থেকে উত্তোলন ও ব্যবহার করা শুরু হয়। হীরা ভারতবর্ষের মানুষের কাছে কমপক্ষে ৩ থেকে ৬ হাজার বছর ধরে পরিচিত বলে অনুমান করা হয়। মানুষের জানা সকল প্রাকৃতিক পদার্থ থেকে হীরা অনেক বেশি শক্ত এবং এটি দিয়ে উচ্চতম তাপমাত্রা পর্যন্ত কাজ সম্ভব। হীরাকে আদর্শ ধরে তৈরি করা খনিজের কাঠিন্য পরিমাপ করার মোহ স্কেলের ১-১০এ অনুযায়ী হীরার কাঠিন্য ১০। ভূ-অভ্যন্তরে প্রায় ১৪০ থেকে ১৯০ কি.মি. নিচে পৃথিবীর কেন্দ্র ও পৃথিবীর আবরণের মাঝে প্রচণ্ড তাপ ও চাপের কারণে হীরা গঠিত হতে প্রায় ১ থেকে ৩.৩ বিলিয়ন বছর সময় লাগে বলে বৈজ্ঞানিকদের ধারণা। গবেষকদের মতে, সকল হীরাই পৃথিবীতে তৈরি হয়েছে এমন নয়; পৃথিবীতে এমন অনেক হীরা পাওয়া গেছে যেগুলো পৃথিবীর বাইরে তৈরী।

মূল্যমান নিরূপণ[সম্পাদনা]

হীরার মূল্য কেমন হবে তা নির্ভর করে চারটি বিষয়ের উপর। যথা – রং কিরূপ, কীভাবে কাটা হয়েছে, কতটা স্বচ্ছ প্রকৃতির এবং কত ক্যারেট ওজনের। ক্যারেট স্বর্ণের ক্ষেত্রে বিশুদ্ধতার একক। মানে যে কোন স্বর্ণের ২৪ ভাগের কত ভাগ স্বর্ণ তা বোঝাতেই ক্যারেট ব্যবহৃত হয়। ২৪ ক্যারেট বলতে বোঝায় ২৪ ভাগের ২৪ ভাগই স্বর্ণ অর্থাৎ ৯৯.৯ শতাংশ খাঁটি স্বর্ণ (যা ব্যবহারের অনুপযোগী)। আর রত্নপাথরের ক্ষেত্রে ক্যারেট হচ্ছে ভরের একক। এক্ষেত্রে ১ ক্যারেট = ০.২ গ্রাম বা ২০০ মিলিগ্রাম। খনিজ হীরক এবং অলঙ্কারের জন্য প্রস্তুত কাটা হীরার মাঝে মূল্য পার্থক্য ব্যাপক।

রক্ত হীরক[সম্পাদনা]

আফ্রিকায় হীরার প্রচুর খনি আছে। এ সব হীরা থেকে প্রাপ্ত অর্থ যুদ্ধ, হানাহানি, সন্ত্রাস ইত্যাদির অর্থায়নে ব্যবহৃত হয়। এজন্যে এরূপ হীরাকে রক্ত হীরক নামে অভিহিত করা হয়। বিশেষত দক্ষিণ আফ্রিকায় হীরক তাদের অর্থনৈতিক উন্নতির প্রধান কারণ । ব্লাড ডায়মন্ড (সংঘাত হীরা, বাদামী হীরা, গরম হীরা, বা লাল হীরাও বলা হয়) হীরা হল যুদ্ধক্ষেত্রে খনন করা হীরা এবং বিদ্রোহ, আক্রমণকারী সেনাবাহিনীর যুদ্ধ প্রচেষ্টা, সন্ত্রাসবাদ বা যুদ্ধবাজের কার্যকলাপের জন্য বিক্রি করা হয়। শব্দটি নির্দিষ্ট অঞ্চলে হীরা বাণিজ্যের নেতিবাচক পরিণতিগুলি হাইলাইট করতে বা কোনও পৃথক হীরাকে এই জাতীয় অঞ্চল থেকে এসেছে বলে লেবেল করতে ব্যবহৃত হয়। অ্যাঙ্গোলা, আইভরি কোস্ট, সিয়েরা লিওন, লাইবেরিয়ায় গৃহযুদ্ধের সময় খনন করা হীরা.

প্রতিবেদনে অনুমান করা হয়েছে যে ১৯৮০ এর দশকে মোট হীরা উত্পাদনের প্রায় ২১% অবৈধ ও অনৈতিক উদ্দেশ্যে বিক্রি করা হয়েছিল এবং ১৯% বিশেষত দ্বন্দ্ব প্রকৃতির ছিল। 1999 সালের মধ্যে, ওয়ার্ল্ড ডায়মন্ড কাউন্সিল দ্বারা অবৈধ হীরা বাণিজ্য বিশ্বের হীরা উত্পাদনের 4% হ্রাস পেয়েছে বলে অনুমান করা হয়েছিল। ওয়ার্ল্ড ডায়মন্ড কাউন্সিল জানিয়েছে যে ২০০৪ সালের মধ্যে এই শতাংশটি প্রায় ১% এ নেমে এসেছে এবং আজ অবধি ওয়ার্ল্ড ডায়মন্ড কাউন্সিল এই অবৈধ বাণিজ্যকে কার্যত নির্মূল করার কথা উল্লেখ করেছে, যার অর্থ বিক্রি হওয়া ৯৯% এরও বেশি হীরার আইনী পটভূমি রয়েছে।

জাতিসংঘের রেজোলিউশন সত্ত্বেও, ইউএনআইটিএ তার যুদ্ধের প্রচেষ্টার অর্থায়নের জন্য কিছু হীরা বিক্রি বা বাণিজ্য চালিয়ে যেতে সক্ষম হয়েছিল। এই অবশিষ্ট অবৈধ বাণিজ্য কীভাবে পরিচালিত হচ্ছে তা সন্ধান করতে জাতিসংঘ যাত্রা শুরু করে এবং তদন্তের জন্য কানাডার রাষ্ট্রদূত রবার্ট ফাউলারকে নিয়োগ দেয়। 2000 সালে, তিনি ফাউলার রিপোর্ট তৈরি করেছিলেন, যা বাণিজ্যের সাথে জড়িত দেশ, সংস্থা এবং ব্যক্তিদের নাম দিয়েছিল। প্রতিবেদনটি হীরা এবং তৃতীয় বিশ্বের দ্বন্দ্বের মধ্যে যোগসূত্র স্থাপনের জন্য কৃতিত্ব দেওয়া হয় এবং সরাসরি জাতিসংঘের সুরক্ষা কাউন্সিলের রেজোলিউশন 1295, পাশাপাশি কিম্বারলে প্রসেস সার্টিফিকেশন স্কিমের দিকে পরিচালিত করে। ২০১৩ সালে প্রতিবেদনটি প্রকাশিত হওয়ার পর আফ্রিকার এসব দেশের চোরাকারবারিরা সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের পোস্টের মতো কম পরিশীলিত চ্যানেলের মাধ্যমে রক্তের হীরা বিক্রি করছিল। এবং ইউএনআইটিএ দ্বারা উত্পাদিত অ্যাঙ্গোলা থেকে রাইনস্টোনগুলি ক্যামেরুনে কেনাবেচা করা হচ্ছিল যাতে তাদের বৈধ হিসাবে বিক্রি করার জন্য ক্যামেরুনিয়ান শংসাপত্র পাওয়া যায়।

হলুদ হীরক[সম্পাদনা]

হীরার খনি[সম্পাদনা]

খনির তালিকা
খনির নাম দেশের নাম মহাদেশের নাম
ক্যাটোকা হীরক খনি এঙ্গোলা আফ্রিকা
ফুকাউমা হীরক খনি
লুয়ারিকা হীরক খনি
বাকেন হীরক খনি দক্ষিণ আফ্রিকা
কালিনান হীরক খনি (সাবেক প্রিমিয়ার খনি)
ফিন্‌স্চ হীরক খনি
কিংবার্লি, নর্দান কেপ
কফিফন্টেন খনি
ভেনেটিয়া হীরক খনি
মুরোয়া হীরক খনি জিম্বাবুয়ে
উইলিয়ামসন হীরক খনি তাঞ্জানিয়া
লেতসেং হীরক খনি লেসোথো
মির খনি রাশিয়া এশিয়া
উদাচনি পাইপ
গোলকোন্দা ভারত
কোল্লুর খনি
পান্না
বুন্দার প্রকল্প
ডায়াভিক হীরক খনি, নর্থওয়েস্ট টেরিটরি কানাডা উত্তর আমেরিকা
ইকাটি হীরক খনি, নর্থওয়েস্ট টেরিটরি
জেরিকো হীরক খনি, নুনাভাট
স্ন্যাপ লেক হীরক খনি, নর্থওয়েস্ট টেরিটরি
ভিক্টর হীরক খনি, অন্টারিও
গ্যাহচো কুই হীরক খনি প্রকল্প, নর্থওয়েস্ট টেরিটরি
ক্রেটার অব ডায়মণ্ডস্‌ স্ট্যাট পার্ক, আরকানসাস যুক্তরাষ্ট্র
কেলসে লেক হীরক খনি, কলোরাডো
আর্গাইল হীরক খনি অস্ট্রেলিয়া ওশেনিয়া
এলেনডেল হীরক খনি
মার্লিন হীরক খনি

বাংলাদেশে হীরক[সম্পাদনা]

বাংলাদেশে হীরার কোনো খনি নেই। তবে হীরকখচিত গহনার ব্যবহার প্রচলিত। পাশ্চাত্য রীতি অনুযায়ী হীরকখচিত অঙ্গুরীয় ব্যবহার বিংশ শতকের শেষার্ধে বৃদ্ধি লাভ করে। ১৯৯০ দশকের শেষভাগে বাংলাদেশে প্রথম হীরক কাটার কারখানা স্থাপিত হয়। আমদানীকৃত খনিজ হীরা (Rought diamond) ব্যবহার করে পরীক্ষামূলকভাবে হীরক উৎপাদন শুরু হয় ২০০০-এর গোড়ার দিকে। ২০০৬ খ্রিষ্টাব্দে সর্বপ্রথম কাটা হীরা ইউরোপে রপ্তানী হয়। কাটা হীরার এই চালানটি বেলজিয়ামের এন্টওয়ার্প ডায়মণ্ড মার্কেটে বিক্রয় হয়।

তথ্যসূত্র[সম্পাদনা]

  1. "Diamond | Definition, Properties, Color, Applications, & Facts | Britannica"www.britannica.com (ইংরেজি ভাষায়)। ২০২৩-০৮-০৭। সংগ্রহের তারিখ ২০২৩-০৮-১৮ 

বহিঃসংযোগ[সম্পাদনা]